ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জন্ম তারেক মাসুদের। শৈশবের শিক্ষালয় ছিল মাদ্রাসা। পরে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি যুক্ত হন চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ আলমগীর কবিরের অত্যন্ত সফল শিক্ষার্থীদের তিনি ছিলেন একজন। ১৯৮৯ সালে শিল্পী এসএম সুলতানের জীবনকর্ম নিয়ে নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র আদম সুরত। তারেক মাসুদ সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন ১৯৯৫ সালে ‘মুক্তির গান’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির দীর্ঘদিনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ‘মুক্তির গান’ ছিল যেন এক বিপ্লব। একাত্তরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের দুর্লভ চিত্র সবার সামনে তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে দেন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। এর এক বছর পর মুক্তির গানের প্রদর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের আরও স্মৃতি নিয়ে নির্মাণ করেন ‘মুক্তির কথা’।
২০০২ সালে তিনি নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর নিজের ছেলেবেলা নিয়ে অসাধারণ কাহিনীচিত্র ‘মাটির ময়না’। এরপর ২০০৬ সালে অন্তর্যাত্রা এবং ২০১০ সালে রানওয়ে নির্মাণ করেন তারেক মাসুদ। প্রতিটি চলচ্চিত্র পরিচালনায় তার সঙ্গে যৌথভাবে ছিলেন তার ফরাসি বংশোদ্ভূত স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ। তার পরের চলচ্চিত্রের নাম দিয়েছিলেন ‘কাগজের ফুল’। সেই চলচ্চিত্রের লোকেশন নির্ধারণ করতে গিয়েই সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দিলেন তারেক মাসুদ।
তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রের শিক্ষক চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি নগরবাড়ী ফেরিঘাটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অকালে চলে গিয়েছিলেন। তারেক মাসুদকেও কেড়ে নিল সড়ক দুর্ঘটনা।
গুণী নির্মাতা হিসেবে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তারেক মাসুদ। ‘মাটির ময়না’ তাকে এনে দিয়েছে অধিকাংশ পুরস্কার। এর মধ্যে আছে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপরেস্কি আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরস্কার (২০০২), মারাকেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার (২০০২), ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সাউথ ফান্ড গ্রান্ট পুরস্কার (২০০০), সেরা ছবিসহ পাঁচটি শাখায় বাচসাস পুরস্কার (২০০৩), সেরা ছবি ও পরিচালনা শাখায় চ্যানেল আই চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাকিস্তানের কারা চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবিসহ তিনটি পুরস্কার (২০০৩)। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘মুক্তির গান’-এর জন্য প্রামাণ্যচিত্র শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৬), আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘অন্তর্যাত্রা’র জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার (২০০৬), ‘মুক্তির কথা’র জন্য বুয়েন্স আয়ারসে ত্রিমহাদেশীয় উৎসবে সেরা বর্ণনাত্মক প্রামাণ্যচিত্র পুরস্কার (২০০২), ‘আ কাইন্ড অফ চাইল্ডহুড’-এর জন্য ভারতে আন্তর্জাতিক ভিডিও উৎসবে জুরি পুরস্কার (২০০৩)।