গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ রফতানি আয় প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। রেল পরিবহন ব্যবস্থায় চরম দুরাবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করে সংস্থাটি। একই সঙ্গে দক্ষ মানব সংকট বিষয়টিও যোগ করা হয়। ‘বাংলাদেশ রফতানি সুদৃঢ় ও ত্বরান্বিতকরণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে সংস্থাটির কার্যালয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ সঞ্জয় কাঠুরিয়া ও অর্থনীতিবিদ মো. আবুল বাশার এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড অ্যাক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

রফতানি আয় বাড়াতে পণ্যের তালিকায় বৈচিত্র্য আনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের রফতানি আয়ের শতকরা ৮০ ভাগ আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। এরপরে রয়েছে চামড়া, হিমায়িত খাদ্য এবং পাট ও পাটজাত দ্রব্যের অবস্থান। খুব কম পরিমাণে রফতানি হয় এমন কয়েকটি পণ্যে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ছে বলে জানান তিনি। তবে সব ক্ষেত্রে সফলতা আসবে এমনটা আশা করা ভুল হবে বলেও মন্তব্য করেন এ অর্থনীতিবিদ।

এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা জীবন ধারনের উপযোগী পর্যাপ্ত বেতন পায় না। উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে একই বিনিয়োগে ১০ শতাংশ আয় বাড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
সঞ্জয় কাঠুরিয়া বলেন, রফতানি আয় না বাড়লে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে জিডিপিতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময়ে জিডিপিতে রফতানির অংশ ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০০০ সালের মধ্যে জিডিপিতে রফতানির অবদান ১২ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে হলে বাণিজ্য কৌশল ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অধিক জনশক্তি সৃষ্টি করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের শ্রমমান বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রফতানি বাড়াতে পণ্যের বৈচিত্র্য আনা জরুরি। তৈরি পোশাক খাতে রফতানি বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্যতম তৈরি পোশাক রফতানি অদূর ভবিষ্যতে ও মধ্য মেয়াদে গুরুত্ববহ হয়ে থাকবে। সার্বিকভাবে রফতানি বাড়ানোর জন্য কেবল তৈরি পোশাক খাতে বিদ্যমান সামর্থ্য সংহত করেই নয়, বরং অধিক দামের তৈরি পোশাক রফতানির দিকে জোর দিতে হবে।

প্রতিবেদনে বাণিজ্য কৌশল উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শ্রমমান প্রতিপালন সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ খাতটি সারাবিশ্বে দ্রুত বিকাশ লাভ করছে বলে উচ্চমানের চাকরির সুযোগ দিতে পারে বলে পতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
পণ্যের আমদানি-রফতানি যথাসময়ে জাহাজিকরণ, ব্যয় সাশ্রয়ী ও নির্ভরশীল উপায়ে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান সামর্থ্যের ক্ষেত্রগুলোতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। শুল্ক প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, আকাশপথে পণ্য পরিবহন সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং রেল সেবা উন্নয়ন দেশের বাণিজ্য কৌশলের অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে।

মো. আবুল বাশার বলেন, সুস্থ ও নিরাপদ কাজের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সরকারকে আরো নিবিড়ভাবে ব্যক্তিখাতের সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং বস্ত্র কারখানাগুলোকে আবাসিক এলাকা থেকে শিল্প এলাকার নিরাপদ ভবনে স্থানান্তরে সহায়তা দিতে হবে।