বিশ্ব ব্যাংকের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ চুক্তি বাতিল করায় যুক্তরাষ্ট্র ‘হতাশ’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা। তবে এ সমস্যা সমাধানের একটি পথ বেরিয়ে আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই এ সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। দুই পক্ষ আলোচনা করে সমঝোতার একটি উপায় বের করতে পারবে বলেই আমি আশাবাদী।”

দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে দাবি করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি গত ২৯ জুন বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক। এরপর এডিবিও ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়।

দাতা সংস্থা অর্থায়ন বাতিলের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের রূপরেখা ঘোষণা করেন। সোমবার মন্ত্রিপরিষদেও নিজস্ব অর্থায়নে যতো দ্রুত সম্ভব এ সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. ইউনূসকে বাদ দেওয়ার কারণেই বিশ্ব ব্যাংক এই ঋণ চুক্তি থেকে সরে এসেছে- এমন ধারণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মজিনা বলেন, “এটি ঠিক নয়।”

রাষ্ট্রদূত আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকদিন অবস্থান করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন তিনি। বাংলাদেশে পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন ক্রেতারা আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি।
মজিনা বলেন, “তারা বাংলাদেশি পণ্য কিনতে চান। কিন্তু তারা তাদের সুনাম ঝুঁকির মুখে ফেলতে রাজি নন।”

“তারা অনেকেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত এপ্রিলে শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনা, কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সংগঠন করার সুযোগ নিয়েই তাদের এ উদ্বেগ”, বলেন রাষ্ট্রদূত।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও আমিনুল হত্যাকা- ও পোশাক খাতের পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন ক্রেতাদের উদ্বেগের কথা সাংবাদিকদের বলেন।

আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনস (এএফএলসিআইও) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপের আবেদন করেছে জানিয়ে মজিনা বলেন, “চলতি বছরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গেলে তা বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে হরতালের সমালোচনা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, মার্কিন ক্রেতাদের কাছে হরতালের মানে হলো পণ্য সরবরাহের বিলম্ব হওয়া।

পাশাপাশি বন্দর ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকেও নজর দেওয়া উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ কারণেই তার দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তি (টিআইসিএফএ) করতে চায়।

বিষয়ে তিনি বলেন, “এ চুক্তির মাধ্যমে বাঁধাগুলো চিহ্নিত ও তা নিরসনের জন্য করার জন্য একটি ফোরাম গঠন করা যাবে। আমি এ চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী।”

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দৃঢ় বিশ্বাস, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হবেই।

কবে তা হবে- সে বিষয়ে কিছু বলতে না পারলেও মজিনা বলেন, “এ বিষয়ে আমি বাজি ধরতেও রাজি।”