হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ দাফনের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে আছেন তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। এর আগে আজ সোমবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে নুহাশপল্লীতে হুমায়ূনের দাফনের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। 
হুমায়ূন আহমেদের দাফন প্রসঙ্গে বিমানবন্দরের কান্না জড়িত কণ্ঠে শাওন বলেন, ‘উনার (হুমায়ূন আহমেদ) শেষ ইচ্ছা ছিল নুহাশপল্লী। উনাকে আর কষ্ট দিয়েন না। নুহাশপল্লীতেই ব্যবস্থা করেন।’
তবে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম পক্ষের সন্তানেরা চান নুহাশপল্লী যেন তাঁদের বাবার কবরস্থান না হয়। তাঁরা চান, বাবা হুমায়ূন আহমেদকে এমন কোনো জায়গায় দাফন করা হোক, যাতে সবাই সেখানে যেতে পারেন। তাঁর জন্য দোয়া করতে পারেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হুমায়ূন আহমেদের দাফন সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন নোভা, শীলা ও নুহাশ আহমেদ। 
এদিকে এ ব্যাপারে একটি সমাধানে পৌঁছতে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সংসদ ভবন এলাকার বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে ওই বৈঠকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী শাওন যোগ না দেওয়ায় তাঁরা সবাই বর্তমানে ধানমন্ডিতে শাওনের বাসায় গেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব জানিয়েছেন, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জাতীয় ঈদগাহে জানাজার পর আজই হুমায়ূন আহমেদের দাফন সম্পন্ন হবে। নুহাশপল্লীতে দাফন হচ্ছে না, এটি আপাতত নিশ্চিত। বনানী বা শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হতে পারে। 
হুমায়ূন আহমেদের মেজো ভাই লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল গতকাল রোববার সাংবাদিকদের জানান, হুমায়ূন আহমেদের দাফনের স্থান চূড়ান্ত হয়নি। যদিও এর আগে নুহাশপল্লীতেই তাঁর দাফনের কথা বলা হয়েছিল। তবে আপাতত সেই সিদ্ধান্ত বাদ দেওয়া হয়েছে। 
জাফর ইকবাল বলেন, ‘তিনি ছিলেন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের প্রিয় একজন মানুষ। সে কারণে এমন একটি স্থানেই তাঁর কবর হওয়া উচিত, যেন তাঁর অনুরাগীরা সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। নুহাশপল্লীতে কবর হলে সেটি সাধারণ লোকচক্ষুর আড়ালে একটি কোণে গিয়ে পড়বে। আমরা আপাতত তিনটি স্থানের কথা ভেবেছি। এর মধ্যে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবি নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বর, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এবং বনানী কবরস্থান।’
হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি আজ সোমবার সকাল নয়টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। 
নিউইয়র্ক সময় শনিবার রাত ১১টা ৪১ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহবাহী ফ্লাইটটি জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর ছাড়ে। দুবাইয়ে যাত্রাবিরতির পর আজ সকালে বিমানটি ঢাকায় আসে। 
লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই শিশুপুত্র নিষাদ ও নিনিত, শাশুড়ি সাংসদ তহুরা আলী, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম ও শাওনের বোন সেঁজুতি একই ফ্লাইটে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় এসেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আহমেদের মৃত্যু হয়। তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন।