দাতাগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আবারো স্বনির্ভর হওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  মঙ্গলবার ঢাকায় শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আর ভিক্ষা চাওয়া নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব।”

“আমরা কেবিনেটে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা নিজেরাই পদ্মা সেতু করব। কোনো ডোনার আসলে ভাল, আর কারো কাছে ধর্না দেব না”, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করায় সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে যতো দ্রুত সম্ভব এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের পথও খোলা রাখা হয়। তবে সেক্ষেত্রে নিজেদের ‘ভুল’ স্বীকার করে বিশ্ব ব্যাংককেই এগিয়ে আসতে হবে।

ডিসি সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আর মানুষের কাছে হাত পাতা বা সবক শুনতে চাই না, নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই।

সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতি-নির্ধারকরা।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং বিভাগীয় কমিশনাররা এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের পর নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুসাম্মত নাজমুন আরা খানম, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক জামালউদ্দিন আহমেদ ও ঢাকার জেলা প্রশাসক মুহিবুল হক বক্তব্য দেন। এরপর বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন রাজশাহীর আব্দুল মান্নান।

এইচটি ইমাম বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন এবং সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে শেখ হাসিনা ডিসিদের সঙ্গে চা চক্রে অংশ নেন এবং এরপর মতবিনিময় ও মুক্ত আলোচনা করবেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে ডিসিরা চলে যাবেন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। সেখানে শুরু হবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক কার্যঅধিবেশন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকরা রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে যাবেন। এ সময় তিনিও ডিসিদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন। পরে ডিসিরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।

তিন দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টারা আরো ১৯টি অধিবেশনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন।

প্রতিদিনই বিকেল সোয়া ৫টা এবং রাতে সব অধিবেশন শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা সম্মেলনের অগ্রগতি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের অবহিত করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা অনুষ্ঠানে জানান, এবারের সম্মেলনে ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য ৪৭০টি প্রস্তাবনা ডিসিদের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।

যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে তার মধ্যে রয়েছে- ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের সেবা, ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, সার ও কৃষি উপকরণ বিতরণ ও স্বাস্থ্য সেবা খাত।

গত বছর ডিসি সম্মেলনে যে ৫২৩টি সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার মধ্যে ৪২৭টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে স্বল্পমেয়াদী ১৫১টি সিদ্ধান্তের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১৪৯টি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদবি পরিবর্তন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্গম এলাকায় দায়িত্ব পালন ভাতা, ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য পৃথক হিসাব খোলাসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রয়োজন না থাকায় তা করা হয়নি বলে জানান তিনি।