যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় নারায়ণগঞ্জের মানুষ বিএনপি ও তাদের প্রার্থীকে গ্রহণ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে বিএনপি’র সমালোচনার বিষয়ে বলেন, খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী  যেন  ভোট চুরি করে তাদের জিতিয়ে দেয়।প্রধানমন্ত্রী গতকাল জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতির পরও তাদের  সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন কেন? উনি (খালেদা জিয়া) কি ভেবেছিলেন সেনাবাহিনী তাদের জিতিয়ে দেবে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব কি ভোট কারচুপি করা? তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে অনেক খেলা হয়েছে। এর কারণে সেনাবাহিনীকেই অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। অতীতে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী কি পেয়েছে? নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর চেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয় কিভাবে? এটি একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এতে ৭০ ভাগের মতো ভোট পড়েছে। উৎসবের আমেজে মানুষ ভোট দিয়েছে। এ ধরনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কেবল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদ বানানো আমাদের কোন লক্ষ্য নয়। ধনসম্পদ নিয়ে কেউ কবরে যেতে পারে না। মান ইজ্জত এবং আত্মসম্মানবোধটাই বড়।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, সেখানে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী ছিলেন। একজন এক লাখ ৮০ হাজার ভোট পেয়েছেন, অপরজন পেয়েছেন ৭৮ হাজার। আর তাদের প্রার্থী (এডভোকেট তৈমূর) পেলেন ৭৭০০ ভোট। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণেই নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাদের গ্রহণ করেননি। তাদের প্রার্থীকে ভোট দেননি। জনগণের জবাব তো তিনি (খালেদা জিয়া) পেয়ে গেছেন।  নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে কি এমন ঘটেছে যে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তিনি বলেন, যারা সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে বলে টকশোতে কথা বলছেন তাদের বলবো, ২০০৩ সালে সে সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে সেনাবাহিনী দেয়া হয়নি। তখন কি সংবিধান লঙ্ঘন হয়নি? তিনি বলেন, যারা সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে বলে টকশোতে কথা বলছেন তাদের বলবো, ২০০৩ সালে সে সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে সেনাবাহিনী দেয়া হয়নি। তখন কি সংবিধান লঙ্ঘন হয়নি?

 

প্রধানমন্ত্রী গতকাল জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।  

জেল হত্যার শিকার জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করে। কিন্তু বিএনপি এসে বিচার বন্ধ করে দেয়। তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের সরকারি চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করে। আশ্রয় দেয়া হয়। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যতদিন ক্ষমতায় ছিল ততদিন দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। তাদের সময় সারাদেশের ৫০০ স্থানে একসঙ্গে বোমা হামলা হয়। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এই ইতিহাস নতুন না। জিয়া ক্ষমতায় আসার পরও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সেনাবাহিনীর ওপর আঘাত এসেছে। তার সময়ে ১৮ বার সেনাবাহিনীতে ক্যু হয়েছে। সে সময় বহুসংখ্যক সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের নেতা তার স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুদ্ধাপরাধীদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। এখন তিনি মাঠে নেমেছেন ওই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য।