আগামী জানুয়ারি মাস থেকে পরিচয়পত্র তৈরির কাজ শুরু করা হবে।

 ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে দেশের যেসব অঞ্চলে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হবে, সেই এলাকার জেলেদের চাল ও গম বিতরণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে যেকোনো বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলেরা পাবেন আর্থিক সুবিধাও। সরকারের দেওয়া এসব সুবিধা যাতে প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছায়, সে জন্য ৬৪ জেলার জেলেদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ‘মৎস্যজীবীদের নিবন্ধন, পরিচয়পত্র প্রদান ও দুর্যোগ পুনর্বাসন’ কর্মসূচির আওতায় এ পরিচয়পত্র বিতরণ করতে সরকারের ব্যয় হবে মোট ১৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, “জেলেদের স্বার্থরক্ষায় আইডি কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।” মন্ত্রী বলেন, সরকার জেলেদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিলেও কোনো তালিকা না থাকায় প্রকৃত জেলেরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের নেওয়া ‘জাল যার জলা তার’ কর্মসূচি থেকেও জেলেরা তেমন সুবিধা পাচ্ছেন না। ডিম ছাড়ার মৌসুমে জেলেদের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, গত বছর ইলিশের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল। আর এ কারণেই গত বছরের চেয়ে এবার ২গুণ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত ১ অনুষ্ঠানে জেলেদের জীবনের মানোন্নয়নে ও তাঁদের সুযোগ-সুবিধা দিতে কৃষকদের মতো জেলেদের জন্য পরিচয়পত্র প্রণয়নের জন্য মৎস্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরই ধারাবাহিকতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র মতে, দেশের জেলের সংখ্যা ধরা হয়ে থাকে ১৩ লাখ। তবে সারা দেশের প্রায় সোয়া কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ পেশায় জড়িত আছেন। সূত্র আরো জানায়, সারা দেশে জেলেদের সংখ্যা নির্ণয় করতে তাঁদের নিবন্ধন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে উপজেলাভিত্তিক প্রকৃত জেলেদের চিহ্নিত করে ১টি তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে তাঁদের টেকসই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। উপজেলা পর্যায়ে থাকা মৎস্য কার্যালয় এ সমীক্ষা করবে। মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, ডিম ছাড়ার মৌসুমে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ সময় ওই এলাকার জেলেরা মানবেতর জীবনযাপন করেন। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় কেউ কেউ সরকারের নিষেধাজ্ঞা না মেনে কারেন্ট জাল দিয়ে গভীর রাতে জাটকা ধরেন। সরকার এ সময় খুবই সামান্য সহযোগিতা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছায় না। জেলেদের কোনো সহায়তা দিলে দেখা যায় অন্য পেশার লোকজন সেই সহায়তার জন্য হাত পাতে। প্রকৃত তথ্য এবং জেলের সংখ্যা না জানায় অন্য পেশার লোকজনের কাছেই সেই সহায়তা চলে যায়। আরো জানা গেছে, জেলেদের পরিচয়পত্রে তাঁদের পেশা এবং তাঁরা কোন এলাকায় মাছ ধরেন, তা উল্লেখ থাকবে। উপজেলা পর্যায়ে মৎস্য কার্যালয় এ সমীক্ষা করবে। এ বিষয়ে তদারকির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি কমিটি থাকবে, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদপ্তর।