বরাবরের মতোই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। জ্বালানি তেল ও সিএনজির দাম বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার গত সোমবার বিভিন্ন রকম পরিবহনের জন্য নতুন ভাড়ার হার ঠিক করে দিলেও রাস্তার পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। সরকারের নির্ধারিত ভাড়া কেউই মানছে না। সিএনজি-অটো থেকে শুরু করে বিভিন্ন রুটের বাসযাত্রীরা আরেক দফা অসহায়ত্বের কবলে পড়েছেন। সকালবেলায় রাস্তায় বেরিয়েই বাড়তি ভাড়া দাবির মুখে পড়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককে। উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কিংবা ট্রাফিক পুলিশের তেমন কোনো তত্পরতা দেখা যায়নি।
তুহিন নামের এক যাত্রী গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে দূরপাল্লার বাসযোগে মেহেরপুর থেকে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে নামেন। তিনি জানান, ২৫০ টাকার স্থলে তার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে ৩০০ টাকা। পরিবহনের স্টাফরা জানিয়েছে, আজ বুধবার থেকে একই রুটের ভাড়া আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করা হবে। এরপর ওই যাত্রী গাবতলী থেকে মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ ধরে সিএনজি অথবা ট্যাক্সিক্যাব ঠিক করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কেউই মিটারে যেতে রাজি হয় না। চুক্তিতে যে ভাড়া দাবি করে, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে শেষ পর্যন্ত ২৫০ টাকায় একটি কালো ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে তিনি রওয়ানা দেন। তার মতো প্রত্যেক যাত্রীই গতকাল রাস্তায় নেমে একই ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হন। গাবতলী থেকে গুলিস্তান কিংবা যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী সবগুলো মিনিবাসেই গতকাল অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর সরকার নতুন যে ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে সে সম্পর্কে কোনোই ধারণা নেই এসব গাড়ির স্টাফদের। তারা ভাড়া আদায় করেছে নিজেদের ইচ্ছেমতো। আর তাদের কাছে যাত্রীরা ছিলো পুরোপুরি অসহায়। কেউ কেউ প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো নাজেহাল হয়েছেন।
শুধু গাবতলী-গুলিস্তান রুটেই নয়, রাজধানীর প্রতিটি রুটেই গতকাল মঙ্গলবার বাস-মিনিবাসে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। নূর মিয়া নামের এক যাত্রী প্রেসক্লাব থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরী যাবেন। এ রুটে মালঞ্চ পরিবহনের টিকিটের গায়ে ১০ টাকা ভাড়া লেখা রয়েছে। তবে টিকেট বিক্রেতা দুলাল সিএনজির দাম বৃদ্ধির অজুহাতে আরও ২ টাকা বাড়িয়ে ১২ টাকা ভাড়া চাইলেন। অথচ নূর মিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে টিকেটের গায়ে অভিযোগ করার জন্য যে নম্বর দেয়া রয়েছে সেই নম্বরে ফোন করলে অপরপ্রান্ত থেকে জানানো হয়, কোম্পানি এখনও ভাড়া বাড়ায়নি। মিটিং করে ভাড়া বাড়ানোর আগ পর্যন্ত বর্তমান রেটেই যাত্রী পরিবহন করা হবে।
সরকার নির্ধারিত বিদ্যমান ভাড়ার হার অনুযায়ী সর্বনিম্ন দূরত্বের জন্য মিনিবাসের ন্যূনতম ভাড়া ৫ টাকা এবং বাসের ভাড়া ন্যূনতম ৭ টাকা। গত দু দিনে জ্বালানি তেল ও সিএনজির দাম বৃদ্ধির পরও ন্যূনতম ভাড়ার এ হার বহাল রাখা হয়েছে।