নির্দিষ্ট সময় শেষ হলেও দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওনা ১০ কোটি ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৬শ’ ২২ দশমিক ২৮ একর জমির মধ্যে ৫২ দশমিক ৬৫ একর জমির মালিকদের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকায় ওই জমির মূল্য বাবদ ১০ কোটি ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া ১২ দশমিক ৮৩ একর খাস এবং অর্পিত সম্পত্তির দখল বিষয়ে আপত্তি থাকায় ওই জমির মূল্য বাবদ ২ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করা যায়নি।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১শ’ ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ১২ হাজার ২শ’ ৬০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ৫শ’ ২৮ একর জমির মূল্য বাবদ ১শ’ ০৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭শ’ টাকা, অবকাঠামো ও গাছপালার ক্ষতিপূরণ বাবদ ১১ কোটি ৯ লাখ ২শ’ ৩১ টাকা, ১শ’ ৫৫ জন ভূমিহীনের মধ্যে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং শস্যক্ষেত ক্ষতিপূরণে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ৩শ’ ২৯ টাকা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, দিনাজপুর জেলা জজ আদালতে ৫২ দশমিক ৬৫ একর জমির মালিকানা নিয়ে ১৮টি মামলা বিচারাধীন থাকায় ওই জমির মূল্য বাবদ ১০ কোটি ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
খাস জমি এবং ভিপি সম্পত্তির দখল ও মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। ওই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ঈদগাহ্ ও কবরস্থান পরিবর্তনের জন্য ১০ দশমিক ৫১ একর সম্পত্তির ২ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নিষ্কণ্টক মালিকানা সংক্রান্ত ৩৫ একর জমির মালিকের চেক দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ওই জমির মূল্য বাবদ শিগগিরই ৭ কোটি ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৩শ’ টাকা দেওয়া হবে।
এজন্য মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অবকাঠামো ও গাছপালা বাবদ ক্ষতিপূরণের ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪১ টাকার চেক প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু জমির মালিকরা দখল হস্তান্তর না করায় এসব চেক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, ৫শ’ ৮ জন ভূমিহীন ক্ষতিপূরণের দাবিতে আবেদন করেছিলেন। তদন্ত করে ১শ’ ৫৫ জন ভূমিহীনকে চেক দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। শস্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮ লাখ ৪ হাজার ৪৮৭ টাকা চেক দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হামিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, একটি মহল অহেতুক ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জমির মালিক ও প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। তবুও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আন্দোলনের নামে চেক দিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
জমির প্রকৃত মালিক সনাক্তকরণে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের চেক দিতে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হামিদুল হক।
উল্লেখ্য, পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন শুরু করে। ফলে খনি অভ্যন্তরে ভূমিধসের সৃষ্টি হয়।
এতে ওই এলাকার উত্তর ও পূর্বদিকের মৌপুকুর, বাঁশপুকুর, জিগাগাড়ি, কালুপাড়া, বলরামপুর, বৈদ্যনাথপুর, বড়পুকুরিয়া, পাতড়াপাড়াসহ ২০টি গ্রামে ২ হাজার ৬শ’ পরিবারের অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধসে পড়ে।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব লোকজন তাদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর ৬শ’ ২৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থায়ী ক্ষতিপূরণের জন্য প্রায় ১শ’ ৯১ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে।
ক্ষতিপূরণ প্যাকেজের টাকা ২০১১ সালে ৫ এপ্রিল দিনাজপুর জনতা ব্যাংকে জেলা প্রশাসকের হিসাব নম্বরে জমা করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান শুরু হয়ে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই টাকা প্রদানের সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা এখনও সবাই বুঝে পাননি।