নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে উদ্বেগ-আশঙ্কা বাড়ছেই।  তার অবস্থার আরো অবনতি ঘটেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হুমায়ূন বমি করায় তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্য, স্বজন-শুভানুধ্যায়ীসহ প্রবাসীরা।

নিউইয়র্কের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের আইসিইউতে গত ১০ দিন ধরে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে হুমায়ূনকে। এর মধ্যে গত চারদিন ধরে পুরোপুরি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে বমি করার পর বেলভিউ হাসপাতালের চিকিত্সকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের খবর দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, চিকিত্সক হিসাবে তারা সব চেষ্টা করেছেন। এখন শুধু আল্লাহই পারেন, হুমায়ূন আহমেদকে ফিরিয়ে দিতে। তবে তার মস্তিষ্ক কাজ করছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

তার ফুসফুসে পানি জমেছে বলে জানিয়ে চিকিৎসকরা আরো জানিয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদের শরীরে একটি ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। কিন্তু ভাইরাসটি সনাক্ত করতে না পারায় চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ সময় পরিবারের সদস্যসহ স্বজন-শুভানুধ্যায়ীরা কান্নাকাটি শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে।

উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রিয় লেখককে এক নজর দেখতে হাসপাতালে ভীড় করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের হস্তক্ষেপ করতে হয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফররত নাট্যব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর হুমায়ূনকে দেখে এসে জানিয়েছেন, এখন যদি তিনি ফিরে আসেন, তবে সেটি হবে ‘মিরাকল’। মঙ্গলবারও বন্ধু হুমাযূন আহমেদের খবর নিতে হাসপাতালে ছুটে যান তিনি।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম এ মোমেন মঙ্গলবার হাসপাতালে হুমায়ূনকে দেখে এসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রবাসের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফাহিম রেজা নূর রাত সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদকে দেখে এসে জানান, হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বিছানায় নিস্তেজ-নিথর দেহ পড়ে ছিল। মুখে অক্সিজেন লাগানো ছিল। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চলচ্চিত্রকার ও সাংবাদিক কবীর আনোয়ার জানান, হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হুমায়ূন আহমেদ।

তবে দেশবাসীর কাছে হুমায়ূনের জন্য দোয়া চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছোট ভাই জনপ্রিয় লেখক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে দুইবার অস্ত্রোপচারের কারণে তার সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছে।

নিউইয়র্ক সময় মঙ্গলবার রাত ১১টায় এক বিবৃতিতে তারা আরো জানান, ইনফেকশনসহ নতুন কিছু পোস্ট অপারেটিভ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমানে শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতার কারণে তাকে রেসটেরেটরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতার কারণে দেওয়া রেসটেরেটরি সহায়তা প্রক্রিয়াটি খুবই অস্বস্তিকর বলে বেশিরভাগ সময়ই তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। এজন্য অত্যন্ত ধীরগতিতে তিনি আরোগ্য লাভ করছেন।

বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের চিকিত্সায় সপরিবারে নিউইয়র্কে আসেন হুমায়ূন আহমেদ। গত ১২ জুন তার বৃহদান্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১০ দিন পর ২১ জুন দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে নিউইয়র্কের বিশ্বখ্যাত বেলভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। অস্ত্রোপচারের আগে তার শরীরে ১২টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।

মেহের আফরোজ শাওন ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ছাড়াও মেহের আফরোজ শাওনের মা সংসদ সদস্য বেগম তহুরা আলী এবং এক বোন সার্বক্ষণিকভাবে হাসপাতালে অবস্থান করছেন।