বিডিআর জওয়ানরা পিলখানায় বিদ্রোহের পর সমঝোতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে তার বাসভবনে গিয়ে ফটকে ভুল নাম বলেছিলেন । সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয়টিও তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোপন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন।

পিলখানা হত্যা মামলায় বুধবার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। সকালে পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢাকার আদালতের বিশেষ এজলাসে হাজির হয়ে জয়নুল আবেদীন নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে তাকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শামীম সরদার এবং ফারুক আহমেদ।

মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদীন আদালতে বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সময় তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক ছিলেন। সাক্ষীর জবানবন্দিতে তিনি বলেন, বিদ্রোহের প্রথম দিন বিকালে বিডিআর সদস্যরা যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ভবনের ফটকে তাদের আর্চওয়ের মাধমে তল্লাশি করা হয়। পরে সাদা কাগজে ১২ জনের নাম লিখে রাখা হয়।

পরিস্থিতির কারণে তখন তাদের পুরো পরিচয় নেওয়া সম্ভব হয়নি। জেরা শেষে আদালতের বাইরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে গিয়েছিলেন ১৪ জন। কিন্তু‘ নাম লেখা হয়েছিলো ১২ জনের। “ সে সময় তারা এতো উগ্র ছিল আর উদ্ধত ছিল যে তাদের সাথে কথা বলাই ছিল মুশকিল।” তিনি জানান, বিদ্রোহী জওয়ানরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢোকার সময় ভুল নাম বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে তারা বিডিআর কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয়টিও গোপন করে বলে পরে তিনি জানতে পারেন। আদালতে জেরার জবাবে মেজর জেনারেল জয়নুল বলেন, সেদিন যারা বৈঠকে গিয়েছিলেন, ‘পরিস্থিতির কারণে’ তাদের নাম সেদিন রেজিস্ট্রারে তোলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া তাদের আগমনে উদ্দেশ্য, সেদিনের তারিখ বা সময়ও লেখা হয়নি। “বৈঠক শুরুর মহূর্তে বিদ্রোহীরা শর্ত দেয়, সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা থাকতে পারবে না। তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি বের হয়ে আসি”, আদালতকে বলেন জয়নুল। তবে পরে তিন বাহিনীর প্রধানরা বৈঠকে যোগ দেন বলে এই সেনা কর্মকর্তা জানান। মেজর জেনারেল জয়নুলের জেরা শেষ হওয়ার পর এসএসএফ কর্মকর্তা কর্নেল সৈয়দ আহমেদ আলী এবং সে সময়ের এসএসএফ কর্মকর্তা (বর্তমানে বিমান বাহিনীতে কর্মরত) স্কোয়াড্রন লিডার খালেদ মীর সালেহ আদালতে সাক্ষ্য দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরাও করেন। এদিকে আসামি ডিএডি হাবিব তার আইনজীবী নিয়োগ না করায় সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে তার পক্ষে লড়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও জেরার সময় দুই দফা তাকে বাধা দেন হাবিব। সাক্ষী কর্নেল সৈয়দ আহমেদ আলীকে জেরার সময় ডিএডি হাবিব চিৎকার করে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বলেন, তিনি নিজেই জেরা চালাতে চান। এ পর্যায়ে আদালত জানায়, আইনে তাকে জেরা করতে দেওয়ার সুযোগ নেই। তখন হাবিব বলেন, এর আগে তিনি ৮জন সাক্ষীকে জেরা করেছেন।

জবাবে আদালত জানায়, সেসময় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগ না হওয়ায় তাকেই জেরা করতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু সরকার এখন আইনজীবী দিয়েছে, সেহেতু সেই সুযোগ আর দেওয়া সম্ভব নয়। পরে উত্তেজিত হয়ে হাবিব চিৎকার করে বলতে থাকেন, “এখানে মাস্তানি করার জন্য দাঁড়িয়েছে। মাস্তানি করা হচ্ছে।” প্রধান প্রসিকিউটার ব্যারিস্টার আনিসুল হক আসামির এই আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে অনুরোধ জানালেও বিচারক নিরব থাকেন।

সাক্ষ্য ও জেরা শেষে মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হক এ মামলার কার্যক্রম ৬ অগাস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হন। রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর নাম বদলে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। বিদ্রোহের ঘটনায় বাহিনীর নিজস্ব আইনে এবং হত্যার ঘটনায় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই বিচার চলছে।