রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ভারতের সিকিম এলাকায় হওয়ায় এ যাত্রায় বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে দেশ রক্ষা পেলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 এছাড়া আমাদের দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের জন্য ভূতাত্তি্বক পরিবেশও বিদ্যমান রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে চারটি ফল্ট রয়েছে তাতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত আছে। এসব ফল্টে অতীতে যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছে তা ৭ মাত্রার বেশি ছিল। ডাউকি ফল্টে ১৮৯৭ সালে ৮.৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। মধুপুর ফল্টে ১৮৮৫ সালে ৭ মাত্রার ওপরে ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৭৬২ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল সীতাকু–মিয়ানমার ফল্টে। আসাম-সিলেট ফল্টে ভূমিকম্প হয়েছিল প্রায় ৪০০ বছর আগে। অর্থাৎ এসব ফল্টে গড়ে ১০০ বছর পূর্বে ভূমিকম্প হয়েছিল। এখন বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তা এসব ফল্টে সঞ্চিত আছে। এতে করে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কায় রয়েছে বাংলাদশে।
বিগত ১৫০ বছরে বাংলাদেশে ৭টি বড় আকারের ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প যার কেন্দ্র ছিল ভারতের শিলং শহরে। তবে ওই সময় বহুতল ভবন না থাকায় তেমন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রাজউক সূত্রমতে, ঢাকা মহানগরীর ৫৯০ বর্গমাইল এলাকায় মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শহরেই রয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ভবন। এর মধ্যে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা প্রায় ৫ হাজার বহুতল ভবনকে চিহ্নিত করেছে রাজউক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আকতার দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা। সেইসঙ্গে ঢাকায় রয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পে ধসে যেতে পারে ১০ শতাংশ ভবন। এতে কমপক্ষে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ধসে যাওয়া ভবনে অবরুদ্ধ হবে ৫ থেকে ১০ লাখ মানুষ।
এদিকে ফায়ার ব্রিগেড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভূমিকম্পের কারণে দেশের পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ ছিল। কেন্দ্রগুলো হলো_ টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, নোয়াপাড়া, ফরিদপুর এবং বারকুক-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে।