পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় একলা চল নীতি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে চলার তাগিদ দিলেন অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় অর্থনীতির চরিত্র হলো একলা চল। এখানকার বড় দেশ হিসেবে ভারত যেটা বরাবরই নিজেদের প্রাধান্য বজায় রেখে চলেছে। অন্যরাও নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। ফলে সমন্বিত কোন উদ্যোগই চোখে পড়েনি। বৈশ্বিক মন্দাজনিত চ্যালেন্স মোকাবিলা করতে হলে একে অন্যের সঙ্গে যুক্তভাবে কাজ করতে হবে।
গককাল রাজধানীর একটি হোটেলে দু’দিনব্যাপী চতুর্থ দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন ও যোগাযোগ একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই উন্নয়নের জন্যই এখন এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উন্নয়ন নির্ভর করছে নিজেদের সহযোগিতার ওপর। এক্ষেত্রে ট্রানজিট প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সব দ্বার খুলে যেতে পারে।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোর সবার হাতে হাইড্রোলিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের যথেষ্ট ক্ষমতা সবার কাছে নেই। সেক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বিকল্প উৎস হতে পারে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়াও আছে। তিনি বলেন, যাদের কাছে হাইড্রোলিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে তাদের হাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎসহ সব ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদনরে ক্ষমতাও রয়েছে। এক্ষেত্রে নেপালের হাতে হাইড্রোলিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি বড় সমস্যা।
ইব্রাহিম হোসাইন জাকি বলেন, এ অঞ্চলের বড় সমস্যা দুর্র্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি তিনি জোর দেন।
ড. শাম এল ভাতিজা বলেন, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক নানা প্রতিবন্ধকতা যেমন আছে তেমিন আছে সম্ভাবনা। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টার কাছে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. সারাথ অ্যামুনুজামা বলেন, শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী কর্মকা- অর্থনীতিকে দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করেছিল। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী কর্মকা-কে প্রতিহত করার পর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াছে। এর জন্য সবচেয়ে বড় যে দুটি বিষয় কাজ করেছে তা হলো-রেমিটেন্স ও সার্ক, এসকাপ ও আশেপাশের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য। এ সব ইতিবাচক কারণেই গতবছর শ্রীলঙ্কায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
নাগেশ কুমার বলেন, অর্থনৈত্রিক মন্দা দীর্ঘমেয়াদি হলে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ অঞ্চলের কৃষি এখনো মৌসুমনির্ভর। কৃষিতে উৎপাদন বাড়লেও কৃষিতে বৈপ্লবিক কোন পরিবর্তন হয়নি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’র (সিপিড) চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক অর্থ-সহযোগিতা বিষয়ক সিনিয়র মন্ত্রী ড. সারাথ অ্যামুনুজামা, সার্কের সাবেক মহাসচিব ইব্রাহিম হোসাইন জাকি, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মন্ত্রী ড. শাম এল ভাতিজা, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, এসকাপের দক্ষিণ এশীয় পরিচালক নাগেশ কুমার প্রমুখ।