ইরানকে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হত্যার পরিকল্পনা করার অভিযোগে ইরানের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার ওবামা এ হুঁশিয়ারি জানান।

ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ওবামা বলেন, ইরানের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপকেই সরিয়ে রাখছে না যুক্তরাষ্ট্র। সচরাচর মার্কিন কর্তৃপক্ষ এ ধরনের শব্দ বন্ধ ব্যবহারের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা থেকে শুরু করে সেনা অভিযান পর্যন্ত সবগুলো পদক্ষেপকেই বুঝিয়ে থাকে। ওবামা বলেন, ‘এটি ইরান সরকারের ভয়ঙ্কর ও বেপরোয়া আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ’। ওই ঘটনা সম্পর্কে এটিই মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম মন্তব্য।
মার্কিন ট্রেজারির আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড কোয়েন সিনেট কমিটিতে বলেন, ‘কীভাবে চাপ বাড়ানো যায় সে বিষয়টি আমরা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ সৌদি আরব বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় ‘সমুচিত জবাব’ দেয়ার ঘোষণা দিলে ওপেকভুক্ত দুই শীর্ষ তেল উৎপাদক রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। অস্ট্রিয়া সফররত সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স সৌদ আল ফয়সাল বলেন, সব তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে এটা নিশ্চিত যে, ইরান সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ‘হত্যাপ্রচেষ্টা’ পরিকল্পনার জন্য দায়ী। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইরান এর আগেও আরব বিশ্বে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তবে ইরান একে তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদ তৈরির লক্ষ্যে একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত বলে দাবি করেছে।
এ প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, ‘এটি পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের অব্যাহত নির্বুদ্ধিতা ও নিষ্ফল কৌশলেরই অংশ। কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচারণা কোন ফল বয়ে আনবে না। তারা আবারও ব্যর্থ হবে।’ ইরান ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বলে মঙ্গলবার অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরান তার এজেন্টদের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সৌদি দূত আবেদল আল জুবেইরকে হত্যা করতে চেয়েছিল বলে মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এরিক হোল্ডার বলেন, ‘সৌদি দূতকে হত্যার ওই যড়ষন্ত্র ইরানে পরিকল্পিত, ইরান আয়োজিত ও ইরান পরিচালিত’। সৌদি দূতকে হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের দ্বৈত নাগরিক মানসুর আরবাবসিয়ারকে (৫৬) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। হত্যা পরিকল্পনায় যুক্ত অন্য ব্যক্তির নাম গোলাম শাকুরি। তিনি ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর আল কুদস ব্রিগেডের সদস্য এবং বর্তমানে ইরানেই আছেন বলে জানান হোল্ডার। ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারাষ্ট্রগুলো পরমাণু কর্মসূচির আড়ালে বোমা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। তবে ইরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইরানের দাবি, শান্তিপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যেই তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের বৈরিতাও প্রকাশ্য। সর্বসাম্প্রতিক সৌদি রাষ্ট্রদূত হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও তিক্ত করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।