আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন হত্যা অভিযানে অংশ নেওয়া মার্কিন নেভি সিলের সদস্য মার্ক ওয়েন বিন লাদেন হত্যার পুরো ঘটনা বর্ণনা করে সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন। বিন লাদেন হত্যার স্বীকারোক্তি বর্ণনা করে লেখা এটিই প্রথম কোনো বই। ‘নো ইজি ডে’ নামের বইটিতে তিনি নিজেই গুলি করে বিন লাদেনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ৩৬ বছর বয়সী মার্ক ওয়েন নামের এই লেখকের আসল নাম ম্যাট বিসোনেট।

তিনিসহ নেভি সিলের মোট ছয় সদস্য বিন লাদেন হত্যা অভিযানে অংশ নেন। আফগানিস্তানের জালালাবাদ থেকে দুটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে করে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে এসে তারা এই অভিযান পরিচালনা করেন। বইয়ে ওয়েন লিখেছেন, আমরা আগে থেকে সব ধরনের তথ্য পেয়েই গত বছরের ২ মে অন্ধকার রাতে অভিযানে নামি। বিন লাদেনের বাসভবনে সে ধরনের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না, এটাও আমরা জানতাম। কিন্তু তারপরও কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই এতটা সহজভাবে অভিযান সম্পন্ন হবে, ভাবতেও পারিনি। যা হোক, অভিযানের সময় একটি হেলিকপ্টার তার বাসভবনের ভেতরে আছড়ে পড়ে। এটি মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা দেখে আরেকটি হেলিকপ্টার দ্রুতগতিতে বাসভবনের ছাদে নামানো হয়। ছাদ থেকে চার নেভি সিল সদস্য সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত হেলিকপ্টারটিতে আমি ও আরেক সঙ্গী ছিলাম। আমরা দু’জন দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে থাকি। কারণ আমরা জানতাম দোতলাতেই তিনি থাকতেন। তারপর গুলি চালাতে চালাতে দরজা ভেঙে একটি রুমে ঢুকে পড়ি। সেখানে ঢুকেই এক ব্যক্তিকে তাজা রক্তের ওপর মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি, যাকে ঘিরে কাঁদছে দুই নারী। আমাদের মনে হল, তারা বিন লাদেনের স্ত্রী। পরে লোকটি বিন লাদেন কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃত ব্যক্তির মুখের ওপর থেকে রক্ত সরাতে থাকি। তারপর তার ছবির সঙ্গে চেহারা মেলাতে থাকি। ছবির সঙ্গে চেহারার কিছু মিল খুঁজে পাওয়া গেল।

তারপরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই মহিলাদের জিজ্ঞেস করি, মৃত ব্যক্তিটি কে। তারা অবশ্য তাকে বিন লাদেন বলে পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। বুঝতে পারলাম এ দুই নারী মিথ্যে বলছেন। আমরা মৃত ব্যক্তিটির ছবি তুুলে রাখলাম। ডিএনএ সংগ্রহের জন্য তার কিছু রক্তও নিলাম। উরুর একটি অংশও কেটে রাখলাম। কিন্তু আরও নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ তথ্যটি জালালাবাদে আমাদের কমান্ডার অ্যাডমিরাল ম্যাকর্যাভেনকে তাত্ক্ষণিক জানালাম না। কারণ তিনি প্রতি মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে অভিযানের সর্বশেষ খবর জানাচ্ছিলেন। প্রেসিডেন্টের কাছে কোনো ভুল খবর যাক এটা আমরা চাইনি। দোতলারই বারান্দায় সেই সময় কয়েকটি শিশু ভয়ে কাঁপছিল। আমি একটি মেয়েশিশুকে মৃত ব্যক্তির পরিচয় জিজ্ঞেস করি। ওই ব্যক্তি ওসামা বিন লাদেন বলে মেয়েটি জানায়। এই শিশুটি বিন লাদেনেরই মেয়ে। শিশুরা মিথ্যা বলতে পারে না। তাই সেই সময়ই বিন লাদেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর কমান্ডার ম্যাকর্যাভেনকে সঙ্গে সঙ্গে খবরটি জানানো হয়। মার্ক ওয়েন বলেন, খুব আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, বিন লাদেন আত্মরক্ষার কোনো চেষ্টাই করেননি। এমনকি তার রুমে দুটি বন্দুক পাওয়া যায়। কিন্তু বন্দুক দুটিতে বুলেট লোড করা ছিল না। যে লোকটি টুইন টাওয়ার হামলার মতো ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন, যার নির্দেশে অনেক জঙ্গি আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে, সেই লোকটি বিনা প্রতিরোধে মৃত্যুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করবেন, সেটা ভাবতেই বেশ অবাক লাগছে। যা হোক, তারপর তার মৃতদেহ হেলিকপ্টারে করে আমরা দ্রুত জালালাবাদের দিকে রওনা হই। আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পুরো অভিযান পরিচালনা করতে সময় লেগেছে মাত্র আধা ঘণ্টা। জালালাবাদে পৌঁছার পর হেলিকপ্টার থেকে কম্বলে জড়ানো তার মৃতদেহটি আমিই টেনে একটি ট্রাকে ওঠাই। পরে তা নিয়ে কমান্ডার ম্যাকর্যাভেনের কাছে যাই।

বিন লাদেনের হত্যা অভিযান নিয়ে লেখা এই বই চলতি সপ্তাহেই বাজারে আসার কথা রয়েছে। এদিকে নো ইজি ডে বইয়ের লেখকের বিরুদ্ধে সম্ভবত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে পেন্টাগন। পেন্টাগন দাবি করেছে, ওই বইয়ের লেখক নেভি সিল কমান্ডো সেনাবাহিনীর গোপনীয়তা ভঙ্গ করে চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন। ম্যাট ২০০৭ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে গোপনীয়তা সংক্রান্ত দুটি ফরমে সই করেছিলেন। পেন্টাগনের উপদেষ্টা জেন জনসন মার্ক লেখককে এক চিঠিতে জানান, গোপনীয়তা বিষয়ক চুক্তি লঙ্ঘন করায় ওয়েনের বিরুদ্ধে পেন্টাগন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি তারা বিবেচনা করছে। ডেইলি মেইল।