নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে এক বাংলাদেশি যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও এফবিআই। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস (২১) নামের ওই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও জঙ্গিসংগঠন আল কায়েদাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনাহয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলেতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। এফবিআই বলছে, স্থানীয় সময়বুধবার সকালে (বাংলাদেশে বুধবার সন্ধ্যা) ম্যানহাটানে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সামনে ‘বিস্ফোরকভর্তি’ ভ্যান দাঁড় করিয়ে নাফিস পাশের মিলেনিয়াম হিল্টন হোটেলে যান। সেখান থেকে তিনি ভ্যানে রেখে আসা সেলফোনে বার বার কল দিতে থাকেন এক হাজার পাউন্ড (৪৫৪ কোজি) বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। কিন্তু ভ্যানে সত্যিকারের বিস্ফোরক না থাকায় সেটি আর ফাটেনি। নিউ ইয়র্ক পুলিশ বলছে, নাফিস আসলে এফবিআইয়ের পাতা ফাঁদে পা দেন। তার ওপর নজর রাখা হচ্ছিল গত জুলাই থেকেই। ভ্যানটি চালিয়ে আসার সময় যে লোকটিতার পাশে ছিলেন, তিনি আসলে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা, যাকে নাফিস চিনতে পারেননি। ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে নাফিসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেশিক্ষা ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন নাফিস। আলকায়েদা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই যুবক সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য বিশ্বস্ত লোক খোঁজাশুরু করার পর গত জুলাইয়ে এফবিআইয়ের নজরে পড়েন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নাফিস এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতছনছ হয়ে যায়। প্রথমে তিনি চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করতে। এরপর তিনি রিজার্ভ ব্যাংক, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাল্টিমোরে সেনাবাহিনীর স্থাপনায় বোমা হামলার পরিকল্পনা করেন। তার এ পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে সহযোগী সেজে এফবিআই কর্মকর্তারাই তাকে ২০ ব্যাগ ‘নকল’ বিস্ফোরক সরবরাহ করেন, যাতে তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা যায়। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে মোমেন জানিয়েছেন, নাফিস নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকায় বসবাস করতেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন তারা। নাফিস ‘আসলেই বাংলাদেশি কি না’ তাও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে নাফিসের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কেটুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাংলাদেশি-আমেরিকানদেরও নানা ধরনের ধকল পোহাতে হয়। এরপর জর্জিয়ায় দুটি সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের ঘটনায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েকারাগারে যান এহসানুল ইসলাম সাদেকী ও মোশারফ হোসেন নামের দুই বাংলাদেশি। বুধবার ম্যানহাটানে নাফিস গ্রেপ্তার হওয়ার পরযুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এটিই সবচেয়ে আলোচিত খবর হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উঠেআসায় নতুন করে শঙ্কা তৈরিহয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। মার্কিন কংগ্রেসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির চেয়ারম্যান পিটার কিং স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “কাজী নাফিস গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হলো যে আন্তজাতিক সন্ত্রাসী চক্র এখনও যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক আঘাত হানার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।” আকরামুল কাদের বি এন এন টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“মিডিয়ায় বাংলাদেশের নাম ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। আমরা স্টেট ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করেছি গ্রেপ্তার যুবকের বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানাজানার জন্য। সে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিল তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।” “আমাকে আগে নিশ্চিত হতে হবে যে সে কোন দেশের নাগরিক, কী তার জাতীয়তা। বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করলেই বাঙ্গালি হবে-এমন নাও হতে পারে। রোহিঙ্গারাও নানা প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে”, বলেন রাষ্ট্রদূত। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোমেন বি এন এন টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাফিস যদি বাঙ্গালি হয়েও থাকে, তবে সেটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। বাংলাদেশের মানুষ এবং সরকার কখনোই সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়।”