আগামীকাল বুধবার সকালে দেশে আসছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোটভাই ও ইসলামিক টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারের মরদেহ। নিউ ইয়র্কের ব্রুকডেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত সাঈদ এস্কান্দার দুই মাস ধরে ব্রুকডেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে, বড়বোন খালেদা জিয়া, ছোটভাই শামীম এস্কান্দার ছাড়াও অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বিএনপি সূত্র জানান, দিনাজপুরে ১৮দল আয়োজিত জনসভা শেষে ঢাকা ফেরার সময় ছোট ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পান বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান জানান, ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি মুষড়ে পড়েন। অন্যদিকে সাঈদ এস্কান্দারের মৃত্যুর সংবাদে ঢাকা, ফেনী, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিএনপি সূত্র জানায়, মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারের প্রথম নামাজে জানাজা গতকাল বাদ জোহর নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। নিউ ইয়র্ক সময় সন্ধ্যায় এমিরাত এয়ারলাইন্সের বিমানযোগে পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্দেশে রওনা দেবে। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৯টায় তার মরদেহ বাংলাদেশে পৌঁছাবে। দেশে পৌঁছার পর জাতীয় সংসদ ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দাফনের বিষয় চূড়ান্ত হয়নি। মরদেহের সঙ্গে মিসেস সাঈদ এস্কান্দার, তাদের কলেজ পড়ুয়া কন্যা এবং পুত্র দেশে ফিরবেন। এছাড়া বিমানের টিকিট পাওয়া গেলে ভাগ্নেসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও দেশে ফিরবেন। সাঈদ এস্কান্দার পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান জানান, ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত দু’মাস ধরে নিউ ইয়র্কের ব্রুকডেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাঈদ এস্কান্দার।
সাঈদ এস্কান্দার ১৯৫৩ সালের ১৩ই জানুয়ারি দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে দিনাজপুর জেলা বিপ্লবী  ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও পরে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে মেজর হিসেবে পদোন্নতি পেলেও ৮২ সালে তিনি অবসরে যান। সে বছরই বিএনপিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০০১ সালের উপ-নির্বাচনে তিনি ফেনী-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত জিয়া ফোরাম ও ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশনেত্রী ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। দীর্ঘদিন বিএনপির বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত হন। এছাড়া তিনি আমৃত্যু ফেনী জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে সাঈদ এস্কান্দারের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার মো. আবদুল হামিদ এডভোকেট ও ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী গভীর শোক প্রকাশ করেন। শোকবার্তায় তারা বলেন, সাঈদ এস্কান্দারের মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবককে হারালো। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তার পূরণ হওয়ার নয়। দেশ সেবায় মরহুমের অবদান দেশবাসী আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকালের সহকর্মী বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ১৮দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, স্বেচ্ছাসেবক দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল, মহিলা দল, শ্রমিকদল, ড্যাব, বিএনপি মালদ্বীপ প্রবাসী শাখা, ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ (শাহজাতপুর- চৌহালী) উন্নয়ন ফোরাম, সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট, ৩১ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। এছাড়া কনমার্ক লিমিটেড সিকিউরিটিজ হাউজের এমডি মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই’র পরিচালনা পরিষদ। ডিএসই প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমানসহ পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ কর্মকর্তারা এ শোক প্রকাশ করেন। এদিকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারের মৃত্যুতে গতকাল ও আজ ঢাকাসহ সারাদেশে ১৮ দলীয় জোটের পূর্ব ঘোষিত সব কর্মসূচি, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও রাতে দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের মতবিনিময়ের কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আজ দেশব্যাপী শোকদিবস পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এর আওতায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী বিএনপি কার্যালয়গুলোতে কোরআনখানি, কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দেশব্যাপী বিএনপি ও এর সব সহযোগী সংগঠনগুলোকে যথাযোগ্য মর্যাদায় শোকদিবস পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। এদিকে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই ও ফেনী জেলা বিএনপির সভাপতি সাঈদ এস্কান্দারের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক পালন করছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আহমদ মিস্টার জানান, তিন দিন দলীয় নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এছাড়া অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সোমবার প্রথম দিন বিকালে শহরের পাগলা মিয়ার তাকিয়া মসজিদে জেলা বিএনপির উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দ্বিতীয় দিন জেলার সব উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে মিলাদ ও দোয়া এবং তৃতীয় দিনে ইউনিয়ন পর্যায়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।