প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার মন্ত্রিত্ব থাকবে না।তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ থাকলে আমাকে দিন। শুধু বক্তৃতা বা কথায় দুর্নীতি বললে হবে না, সঠিক তথ্য-প্রমাণ থাকবে হবে এ ছাড়া আমি মানবো না।কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি।কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা উপস্থাপনের জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে যৌথ সভায় সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন দলের সভাপতিম-লীর অন্যতম সদস্য ও জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, এইচ টি ইমাম, ড. আলাউদ্দিন, সভাপতিম-লীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, ওবায়দুল কাদের, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দলের উপদফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ। দেশের বাইরে থাকায় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ ও অসুস্থ থাকায় আব্দুল জলিল সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।সভার শুরুতেই বৈঠকের এজেন্ডা তুলে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি। ক্ষমতায় আসার পর পৌনে তিন বছরের মাথায় উপদেষ্টাম-লী ও কেন্দ্রীয় কমিটিকে নিয়ে এই যৌথসভায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি, সামাজিক বিশেষ করে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। আজ শনিবার জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ডক্টর মনমোহন সিংয়ের সফরকে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ বিক্রি করে বিএনপি, আর আমাদের নামে বদনাম দেয়। এবারও বিএনপিসহ বিরোধীদল বলেছিল, তিস্তাসহ কোন চুক্তি হলেই দেশ বিক্রি করে দিয়েছি ধুয়া তুলে হরতালসহ আন্দোলন করবে। কিন্তু তারা এবার আমাদের বিরুদ্ধে দেশ বিক্রির
সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে সম্প্রতি যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে শহীদ মিনারে কিছু মানুষের অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ শহীদ মিনারে বসে বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করছেন। কারোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তোলপাড়ের সৃষ্টি না করে সঠিক তথ্যভিত্তিক প্রমাণ দিন। বক্তৃতা নয়, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ দিতে হবে। কে, কোথায় এবং কিভাবে দুর্নীতি করেছে তার প্রমাণ দিন। তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দেখান এখানে বা এই খাতে দুর্নীতি হয়েছে। কেউ দুর্নীতি করলে মন্ত্রী থাকতে পারবে না। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে দুর্নীতি কিভাবে হয় তা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশের মানুষ দেখেছে। ক্ষমতায় থেকে কিভাবে দেশের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে, তাদের বিরুদ্ধে আজ অনেকেই কিছু বলেন না। দেশের সড়ক-মহাসড়কের বর্তমান বেহাল দশার জন্য বিগত জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দায়ী করে বলেন, বর্তমান সরকারের আড়াই বছরে সড়ক-মহাসড়কগুলোর এ অবস্থা হয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৫ বছর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে সড়কগুলো মেরামত করতে কোনই উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিগত সরকারের ব্যর্থতার দায়ভার আমাদের কাঁধে এসে পড়লেও আমরা বসে নেই। সব সমস্যার সমাধান করতে বর্তমান সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কগুলো মেরামত ও সংস্কারে ১৪শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত বন্ধ হলেই দ্রুত গতিতে সড়ক মেরামত ও সংস্কার কাজ শুরু হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে অত্যন্ত সফল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪৭ সালের পর থেকে কোন সীমানা নির্ধারণ হয়নি। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশের সীমানা চিহ্নিত থাকবে না, সেটা হতে পারে না। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি বলেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় সীমানা নির্ধারণ হয়েছে। ছিটমহলগুলো ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়া ও খালেদা জিয়ারা ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের অবাধ বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত করতে সে দেশের সব পণ্যে শুল্কমুক্ত করে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্য ভারতে প্রবেশে শুল্কমুক্ত করতে কোনই ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। আমরা এবার বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্য শুল্কমুক্ত ভারতে প্রবেশের চুক্তি করেছি। এটাও একটি বড় অর্জন।
বিরোধীদলের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিসহ বিরোধীদলের এখন একটাই টার্গেট_তাদের দুর্নীতিবাজদের রক্ষা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সিঙ্গাপুর আদালতসহ আন্তর্জাতিক তদন্তে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছেলেসহ তার দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের অর্থ পাচার, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আর আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত দুর্নীতির সত্যগুলোর বিচার অবশ্যই হতে হবে। তিনি বলেন, বিরোধীদলের কাছে দুর্নীতি নয়, কে করেছে সেটাই বড় হয়ে গেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা না হলে শান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। যুদ্ধাপরাধী যাকে যখন পাওয়া যাবে তখনই বিচার করা হবে। তিনি বলেন, আমরা তো দেখলাম পঁচাত্তরের পর দেশে শান্তি আসে নাই। দেশের শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য এ বিচার হতেই হবে। তা না হলে দেশে কোনো দিন শান্তি আসবে না, গণতন্ত্র থাকবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বিএনপি বাধাগ্রস্ত করতে চায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আড়াই বছর এবং আমাদের সরকারের আড়াই বছরের তুলনা করলেই এটি বোঝা যায়। তাদের সময়ে আমাদের দুজন এমপিকে হত্যা করা হয়েছিল। আমি নিজেও হামলার শিকার হয়েছি। তারা দেশে একযোগে ৫০০ বোমা ফাটিয়েছে। দেশ তখন জঙ্গিদের অভয়াশ্রম ছিল। প্রতিদিন মানুষ হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমাদের সময়ে অন্তত এসব তো হচ্ছে না। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু মানুষ যত ভালো থাকে তারা আরো ভালো থাকতে চায়। এটিও সত্য।
তিনি বলেন, মাত্র দু’বছরেই আমরা ২৬টি বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করেছি। দু’হাজার দু’শ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করেছি। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছর এই সাত বছরে তার অর্ধেক বিদ্যুৎও উৎপাদন করতে পারেনি।