গর্ভবতী নারী বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তায় ভুগলে শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে। আর প্রসব-পরবর্তী সময়ে নারীর বিষণ্নতা শিশুর বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। ব্র্যাক ও সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের যৌথ গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘অভিশপ্ত চক্রের অবসান’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষকেরা বলেন, আগে ধারণা করা হতো যে দরিদ্র দেশগুলোয় শুধু মায়ের অপুষ্টির কারণে কম ওজনের শিশু জন্ম নেয়। বিশ্বের এ অঞ্চলে এবারই প্রথম জানা গেল কম ওজনের শিশু জন্ম নেওয়ার পেছনে মায়ের বিষণ্নতাও বড় ভূমিকা পালন করে।
ব্র্যাক ও ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার দুটি উপজেলার ৭২০ জন নারীর ওপর গবেষণা চালান। এ দুটি অঞ্চলে ১৮ শতাংশ নারী গর্ভকালে অবসাদগ্রস্ত ছিলেন এবং ১৪ শতাংশ নারী প্রসব-পরবর্তী দু-তিন মাস এবং ৩২ শতাংশ নারী প্রসব-পরবর্তী ছয়-আট মাস সময় বিষণ্নতায় ভোগেন। এঁদের ১৯ শতাংশ কম ওজনের শিশু জন্ম দিয়েছেন। গবেষকেরা বলছেন কম ওজনের শিশুদের মৃত্যুহার বেশি।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নীরজা চৌধুরী। তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিরূপ আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, অযাচিত গর্ভধারণ, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, অবিবাহিত থাকা, স্বামী বা সঙ্গীর সমর্থন না পাওয়া, শ্বশুরবাড়ির শত্রুভাবাপন্ন আত্মীয়স্বজন, স্বামী বা সঙ্গীর নির্যাতন, সমর্থনের অভাব, কখনো কখনো কন্যাশিশু জন্ম দেওয়া ও মানসিক সমস্যায় ভোগার কারণে নারীরা বিষণ্নতায় ভোগেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আখতারী মমতাজ বলেন, শিশুর জন্ম ও বেড়ে ওঠায় মায়ের বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তার প্রভাবের বিষয়টি নতুন। চলমান সরকারি কর্মসূচিতে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রধান গবেষক হাশিমা-ই-নাসরীন বলেন, এটি একটি উদ্বেগজনক সমস্যা। কারণ শিশুর কম ওজন ও অপুষ্টির সঙ্গে শিশুমৃত্যু গভীরভাবে সম্পর্কিত। এটি মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা ও অনুন্নয়নের বৃত্তকে চিরস্থায়ী করতে পারে।’
গবেষক দলের সদস্য মাইগুন এডবর্গ বলেন, জন্মানোর এক বছরের মাথায় শিশু হাঁটতে ও কথা বলতে শেখে। এ সময় শিশুর প্রয়োজনীয় যত্ন বিষণ্নতায় ভোগা মা করতে পারেন না। এতে শিশুর বিকাশ বাধা পায়। মায়ের সঙ্গে শিশুর বন্ধনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আইসিডিডিআরবির গবেষক জেনা হামাদানি বলেন, মতলবে প্রায় তিন হাজার নারীর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, মায়ের বিষণ্নতার কারণে শিশুর কথাবার্তা ও আচার-আচরণে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
সম্মেলনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বব্যাংকের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সাদিয়া আফরোজ চৌধুরী।