জমির স্বত্ব না থাকা এবং জলাধার আইন লঙ্ঘন করে রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় নির্মিত বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গতকাল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে অবৈধভাবে ভবনটি নির্মাণ করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ যে ফৌজদারি অপরাধ করেছে তদন্ত সাপেক্ষে তার ব্যবস্থা নিতে ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া হাতিরঝিল প্রকল্প পরিকল্পনা মাফিক চালিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ভবনটি নির্মাণে জলাধার ও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন জানান, জমির ওপর বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের মালিকানা স্বত্ব নেই। এ কারণে তারা রাজউকের কাছ থেকে পরিকল্পনা অনুমোদনও নিতে পারেন না। আর অনুমোদন নিলেও তা অবৈধ। কারণ জামির মালিক তারা নন।
গত বছর ২রা অক্টোবর এ ভবনের বৈধতা প্রশ্নে একটি সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তার পরদিন হাইকোর্ট সুয়োমোটো রুল জারি করে। দুই সপ্তাহের মধ্যে গণপূর্ত সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বিজিএমইএ সভাপতি, ঢাকার ডিসি ও ডিএমপি কমিশনারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। মামলার শুনানির জন্য গত ২২শে ফেব্রুয়ারি ১০ জনকে এমিকাস কিউরি নিয়োগ করেন আদালত। এরা হলেন, ড. এম জহির, সাবেক এটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, আকতার ইমাম, এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিন, মনসুরুল হক চৌধুরী, আনিসুল হক, সারা হোসেন, মনজিল মোরশেদ, ইকবাল কবির লিটন এবং সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান। বিজিএমইএ-র পক্ষে রোকনউদ্দিন মাহমুদ মামলাটি পরিচালনা করেন।
আদালত র্যাংগস ভবন ও যমুনা ফিউচার পার্কের নির্মাণ সংক্রান্ত মামলার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন, অবৈধভাবে নির্মিত হওয়ার কারণে হাইকোর্ট এগুলো ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল। বিজিএমইএ ব্যবসায়ীদের সংগঠন। দেশের অর্থনীতিতে এর অবদান অনেক। কিন্তু তাই বলে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। ভবনটি বহাল রাখলে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হবে। ভবনটি বেগুনবাড়ি খালে পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলে হাতিরঝিল প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আদালত বলেন, বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ যেহেতু এ জমির মালিক নয় সুতরাং এখান থেকে ভবনটি তাদেরকে সরাতে হবে। বেগুনবাড়ি খাল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে মূল নকশা অনুসারে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার সময় নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালত জলাধার রক্ষা আইন লঙ্ঘন করার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরকে দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন। আদালত বলেন, আর বিজিএমইএ যদি এ ভবনটির মালিক হয়ও তবু জলাধার ভরাট করে নির্মাণ করার কারণে এ ভবনটি ভাঙতে হবে। আদালত আরও বলেন, এ জায়গাটি ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ের জন্য প্রথমে অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এর মালিকানা ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের। পরে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে হস্তান্তর করা হয়।
রাজউকে দেয়া কাগজপত্রে বিজিএমইএ বলছে, আমরা ২০০১ সালে জায়গাটি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কাছ থেকে কিনেছি- কিন্তু এ কি করে সম্ভব? এর পেছনে কোন চক্র কাজ করতে পারে। অধিগ্রহণকৃত জমি জনস্বার্থ ব্যতীত অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় না।
অভিযোগ: বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে যে, বিজিএমইএ ভবন নির্মাণে রাজউকের নকশা অনুসরণ করা হয়নি। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, উন্মুক্ত স্থান ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ লঙ্ঘন করে এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিনাঅনুমতিতে ভবনটি নির্মাণে বেগুনবাড়ি খালের অংশবিশেষ ভরাট করা হয়েছে। এর ফলে খালটির গতিপথ পরিবর্তত হয়েছে যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ভবনটি বেগুনবাড়ি খালের পানির প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন সময় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এ ভবনটি ভাঙার দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।