দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দরপতনে বিনিয়োগকারীরা গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো মতিঝিল এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের ঠেকাতে পুলিশ লাঠিপেটা করে ছয় জনকে আটক করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ারবাজারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এসইসিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ২১৩.২১ পয়েন্ট কমে ৭৭৩৫.২১ পয়েন্টে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ডিএসই-২০ মূল্যসূচক কমে ১৫২.০৭ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৪৭টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১২টির, কমেছে ২৩১টি এবং অপরিবর্তিত ছিল চারটির দাম। চার মাসের মধ্যে গতকাল সর্বনিম্ন ৯৬৯ কোটি ৮৬ লাখ ৮২ হাজার ৭৭৪ টাকা লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ৫৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা কম। তারল্য প্রবাহের ঘাটতি ও শেয়ার বিক্রির চাপের মধ্যে চারদিন ধরেই পুঁজিবাজারে দরপতন ঘটছে। বুধবারও বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে লেনদেনের শেষ পর্যায়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ডিএসইর সামনের সড়কে মিছিল করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা একটি বাস ও প্রাইভেট কার ভাঙচুর করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়। এরপর ডিএসইর সামনের সড়ক আটকে সেখানে বেঞ্চ ও চেয়ার নিয়ে বসে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধরা ডিএসই ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয় থেকে আর কে মিশন রোড পর্যন্ত এলাকা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। ওই সময় এক রাউন্ড রাবার বুলেটও ছোড়ে পুলিশ। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারী ছয়জনকে পুলিশ আটক করেছে। আটককৃতরা হলো মামুন, আলী আকবর, মোবারক হোসেন, বাদশা মিয়া, শহীদুল ইসলাম ও ফয়সাল আহমেদ। সোয়া ৪টা থেকে সড়কের এক পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। মতিঝিল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক এসআই ফয়সাল বলেন, আটককৃতদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। এর আগে বুধবার সূচক কমে ৩২ পয়েন্ট, মঙ্গলবার ২০৩ পয়েন্ট ও সোমবার ১১৯ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। চারদিনে সূচক কমে ৫৬৮ পয়েন্ট। গতকালের বাজার মূল্যায়ন সম্পর্কে ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বাজারে তারল্য প্রবাহ কমে যাওয়া এবং শেয়ার কেনার সামর্থ্য না থাকায় দরপতন ঘটছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু সিদ্ধান্ত এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো চাহিদা মতো ঋণ দিতে না পারায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে পারছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বড় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে না এলে পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি ঘটবে না। বেশিরভাগ বড় বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুনাফা তুলে শেয়ার বিক্রি করায় চাপ বেড়েছে এবং সেই অনুপাতে ক্রেতা না থাকায় দর কমছে।