শপিং মল, খুচরা বাজার, এমনকি ব্যাংকে, জালটাকার ফাঁদে পড়ে প্রতারিতহওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকের। অবশ্য টাকা জাল করার ‘কারিগর’ জামান বিশ্বাসের কাছে এ কাজ ‘খুবই সহজ’। অল্প ‘পুঁজিতে’ লাভও বেশি! পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন,ঈদের আগে আগে টাকা জালকারী চক্রগুলো কয়েকগুণ বেশি তৎপর হয়ে ওঠে। গত রোজার ঈদ ও আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কয়েক দফায় মোটা অংকের জালনোটসহ এর ‘কারবারিদের’ গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশের কথার প্রমাণও মিলেছে। গত ১৩ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ‘প্রধান কারিগর’ জামান বিশ্বাস বলেন, “স্যার জাল টাকা বানাতে আমার কোনো ওস্তাদ লাগে নাই। এমনিতেই শিখে ফেলছি।আর এইটা বানানো তো খুব সোজা কাজ স্যার।” গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ১০ কোটি টাকার জাল নোট ও ৮৮ হাজার রুপির ভারতীয় নোট উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। টাকা কীভাবে জাল করা হয়, আর তা এতো সহজে কীভাবে বাজারে ছড়িয়ে পড়ে- এ ধরনের সাধারণ কিছু কৌতুহলের উত্তর জামান বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থানায়বসে পঞ্চাশ বছর বয়সী জামান জানান, ১৪ বছর ধরে টাকা জাল করার সঙ্গে জড়িততিনি। ১৯৯৮ সালে একটি একশটাকার নোট ফটোকপি করার পরথেকেই জাল টাকার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে তার; শুরু হয় টাকা জাল করার ফন্দি। এর ‘কাজে’ নামার আগে সাইন বোর্ড তৈরির দোকান ছাড়াও প্রিন্টার ও ফটোকপির দোকানে কাজ করেছেন বলে জানান জামান। এই কাজে কি ‘সফটওয়্যার’ লাগে- এমন প্রশ্নে জামানের উত্তর, “না স্যার। টাকা স্ক্যান করে কালার ঠিকমতো মিলানোর পর প্রিন্ট করলেই অবিকল টাকাপাওয়া যায়।” “প্রথমে কালার ফটোকপি দিয়ে নোটের দুই দিক ফটোকপি করার পর স্ক্রিন প্রিন্ট করে বাঘের মাথার জলছাপ দেয়া হয়, এরপর বিশেষ কাগজে তাপ দিয়ে বানানো হয় নিরাপত্তা সুতা।” কাগজ কোথা থেকে সংগ্রহ করতেন তাও জানিয়েছেন জামান। এক লাখ টাকা জাল করতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ওই নোট ৮/১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এই জাল নোটের ‘কারবার’ করেই কুষ্টিয়ায় বাড়ি করেছেন জামান। গ্রেপ্তারের ভয়ে সাধারণত ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ায় থেকেসারা বছর এই কারবার চালালেও ঈদকে সামনে রেখে কামরাঙ্গীরচর এসে টাকা ‘বানাতে’ গিয়েই ধরা পড়েন তিনি। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন শান্তা ওরফেশাবানা নামের এক নারী। তিনি নিরাপত্তা সুতার তৈরি করতেন বলে অভিযোগ আছে। যদিও শান্তা তা অস্বীকার করেছেন। শুধু টাকাই না, জামান শেখ ভারতীয় রুপিও জাল করার পদ্ধতি রপ্ত করেছেন। রুপি কেন জাল করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উত্তম নামে একজন ভারতের মালদহ থেকে এসে ওই রুপি নিয়ে যেত। গত ১৪ বছরে উত্তম ১০ থেকে ১২ বার জাল রুপি নিয়ে গেছে।” প্রথমবার টাকার রঙ্গিন ফটোকপি করার পর টাকা ‘বানানোর’ ফন্দিতে নিজের এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে আশি হাজারটাকায় একটি রঙ্গিন ফটোকপিকরার মেশিন কেনেন জামান। সঙ্গে কিনে ফেলেন অন্যান্য সরঞ্জামও। এরপর শুরু করে দেন টাকা জাল করা। শুরুটা ছিলো ঢাকার জিগাতলায় ভাড়া নেয়া এক বাসায়। এরপর কতো বাসা যে পরিবর্তন করেছেন তা গুণেওশেষ করতে পারেন না এই জালিয়াত কারিগর। জামান জানান, ১৯৯৯ সালে হেলাল নামে এক শিষ্যের ‘বোকামির’ কারণে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ধরা পড়ে ২১ মাস জেল খেটেছিলেন। এরপর জামিনে বের হয়ে এসে আবার পুরোদমে ‘ব্যবসা’ শুরু করেন। একবার ধরা পড়ার পরও জামানকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়নি কেন-এমন প্রশ্নে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, “উচিৎ ছিল। হয়তো নজরদারিও ছিলো। দীর্ঘ সময়তো, তাই এক সময় নজরদারি থেকে দূরে সরে যায় সে।”