আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিসহ জাহাজের প্রাপ্যতা সংকটের কারণে এবার বাংলাদেশকে তেল কিনতে বেশ কিছুটা বেশি মূল্য গুনতে হবে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিজেল কেনা হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৩.৫০ মার্কিন ডলারে। আর এখন কিনতে হবে ৩.৮০ মার্কিন ডলারে। এর আগে অকটেন কেনা হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৭.২০ মার্কিন ডলারে। এখন কিনতে হবে ৭.৩৫ মার্কিন ডলারে। কেরোসিন আগে কেনা হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৪.৫০ মার্কিন ডলারে। এখন কিনতে হবে ব্যারেলপ্রতি ৪.৮০ মার্কিন ডলারে। জেট এ আগে কেনা হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৪.৫০ মার্কিন ডলারে। এখন কিনতে হবে ৪.৮০ মার্কিন ডলারে। এরপরও দেশের পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে শিগগির মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ডিজেল ১ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন, অকটেন ৪৮ হাজার মেট্রিক টন, কেরোসিন ৪০ হাজার মেট্রিক টন ও জেট এ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এর জন্য ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। তবে জ্বালানি তেলের আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয় নির্বাহের জন্য বাজেট বরাদ্দ ছাড়াও আইডিবি থেকে ঋণ, সরকারের থোক বরাদ্দ ও অন্য উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রস্তাবিত জ্বালানি তেল আমদানির অর্থায়ন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ডিজেলের চাহিদা ১৬ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। কেরোসিন ১ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন ও জেট এ ১ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে যে পরিমাণ ডিজেল ও কেরোসিন পাওয়া যাবে তা দিয়ে চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে ডিজেল পাওয়া যাবে ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ও কেরোসিন পাওয়া যাবে ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য অবশিষ্ট পরিমাণ ডিজেল ও কেরোসিন বিভিন্ন দেশ থেকে পরিশোধিত আকারে আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, দেশের চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের কাছ থেকে সরকার চুক্তির আওতায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সাল থেকে পরিশোধিত তেল আমদানি হচ্ছে। তবে সম্প্রতি আমদানিতব্য জ্বালানি তেলের প্রিমিয়াম নিয়ে সমঝোতার জন্য বিপিসির একটি প্রতিনিধি দল সে দেশ সফর করেন। সফরকালীন সময়ে প্রিমিয়াম নিয়ে মধ্যস্থতা হয়। এরই ভিত্তিতে মালয়েশিয়া থেকে চুক্তির আওতায় জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে।
এদিকে ফিলিপাইন থেকেও ডিজেল, অকটেন আমদানি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে আমদানি ক্ষেত্রে কুয়েতের পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ও মালয়েশিয়ার পেটকোসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিল রেখে প্রিমিয়াম নির্ধারণে বিপিসি ঐকমত্যে পৌঁছায়। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের প্রিমিয়ামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিসহ জাহাজের প্রাপ্যতা সংকটের কারণে বেশ কিছুটা প্রিমিয়াম বেশি গুনতে হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে যেসব দেশ থেকে জ্বালানি তেল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে, সেসব দেশের মধ্যে রয়েছেÑ কুয়েত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, মিসর, চীন ও ইন্দোনেশিয়া।