দীর্ঘদিন ধরে অস্থির পুঁজিবাজারে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনের সড়ক অবরোধ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তারা। এদিকে আজ মঙ্গলবার বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ বাজার বয়কট ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও করবে বিনিয়োগকারীরা।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএসইর মূল্যসূচক ৯৭ পয়েন্ট কমে ৬০০০ পয়েন্টের নিচে নেমে গেলে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ রাস্তায় নেমে আসে। তারা মতিঝিলে ডিএসইর সামনের সড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এক পর্যায়ে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস থেকে আরো বিনিয়োগকারী বেরিয়ে এসে মিছিলে যোগ দেন। তারা ইত্তেফাক মোড় থেকে শাপলা চত্বর সড়কে মিছিল করতে থাকেন। এ সময় গাড়ির টায়ার ও খড়কুটায় আগুন দিয়ে সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। এতে রাস্তার দুপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর পৌনে দুটার দিকে কিছু বিনিয়োগকারী ডিএসইর মূল ভবনের ফটক বন্ধ করে দেন। ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা ডিএসইর সভাপতি, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেস্নাগান দেন।

 চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সামনে বেলা দেড়টার দিকে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করে। এদিকে শেয়ারবাজারে ধসের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বগুড়ায় শেয়ারমার্কেট ইনভেস্টর ফোরাম বগুড়ার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ । ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজি বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের নেতারা আজ মঙ্গলবার বাজার বয়কটের ঘোষণা দিলে, শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। বৈঠকে বাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য তারল্য সংকট কমানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়। গতকাল সোমবার বিকালে এসইসির সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নেটিং সুবিধা সহজ করা, সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজারের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানভেদে আলাদাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং টি-৩ থেকে কমিয়ে টি-২তে নিয়ে আসার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন, ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী, সিএসইর সভাপতি ফকরউদ্দিন আলী আহমদ, সিডিবিএলের এমডি আব্দুস সামাদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ডিএসইর সিনিয়র সহসভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটো সাংবাদিকদের জানান, এসইসির সঙ্গে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাজারে তারল্য সংকট দূর করতে আমাদের পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী বুধবার ডিএসইর বোর্ড মিটিং রয়েছে। মিটিং শেষে এসইসিতে সুপারিশ জমা দেয়া হবে।
গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ২৫৬টি কোমপানির ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬৭ হাজার ৭৭৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১৪ কোটি ৪৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭ টাকা; যা আগের দিনের চেয়ে ৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি। এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ৯৭.১১ পয়েন্ট কমে ৫৯২০.৮৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ডিএসই-২০ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ৪৬.২২ পয়েন্ট কমে ৪০৫০.১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। গতকাল লেনদেনকৃত ২৫৬টি কোমপানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে ২১৪টি কোমপানির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮টি কোমপানির শেয়ারের দর।