নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হলে জনগণের ওপর চাপ পড়বে দাবি করে এই পরিকল্পনা থেকে সরকারকে সরে এসে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের পর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু তৈরির পরিকল্পনা তুলে ধরে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের একদিন পরই প্রতিক্রিয়া জানালেন বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ার।
তিনি সোমবার এক আলোচনা সভায় বলেছেন, “পদ্মা সেতুর মতো একটি বৃহৎ প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করার মতো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে আমাদের নেই। এমনিতেই অর্থনীতির দৈন্যদশা। প্রধানমন্ত্রীকে তা অনুধাবন করতে হবে।”
সাবেক এই মন্ত্রীর মতে, সার্বভৌম (সভরেন) বন্ড এবং সারচার্জ আরোপের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ জনগণের ওপর বোঝা বাড়াবে। দেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে
জটিলতা নিরসনে বিশ্ব ব্যাংকসহ দাতা সংস্থার সঙ্গে সমঝোতার পরামর্শ দিয়ে সাবেক এই সচিব বলেন, “সরকারকে বলব, এই পথ (নিজস্ব অর্থায়ন) বাদ দিয়ে তারা দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সংসদে বলেন, দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ এই অর্থবছরেই শুরু হবে। এর সম্ভাব্য ব্যয় হবে ২২ হাজার ৫৫৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। টাকা তুলতে সারচার্জ আরোপ ও বন্ড ছাড়ার কথাও বলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আনোয়ার বলেন, “আমরা মনে করি, বন্ডের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হলে তা জনগণের ওপর বোঝা ও জাতির জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।
“অর্থনীতির দৈন্যদশার মধ্যে হিমশিম খাওয়া সাধারণ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র প্রয়োজনীয় মাধ্যম টেলিফোনের ওপর সারচার্জ আরোপ তাদের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। এরকম সারচার্জ আরোপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সুশীল সমাজ’র উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা আনোয়ার পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে এগোনোর আগে দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলছেন, জনগণের ওপর সারচার্জ বসিয়ে অর্থ সংগ্রহ করবেন। তারপরও তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন না।”
জাতীয় প্রেসক্লাবে অন্য এক আলোচনা সভায় বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারকে আমরা সহযোগিতা করব। তবে এর আগে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির যে কালিমা লেপন করেছে, সেসব দুর্নীতিবাজদের নাম প্রকাশ করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে আনোয়ার বলেন, “জনগণ জানতে চায়, আপনাদের আগে কত সম্পদ ছিল, এখন কত সম্পদ আছে। কীভাবে লন্ডন ও আমেরিকাতে বাড়ি কিনেছেন আপনারা?”
পুঁজিবাজার ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরকার অর্থ ‘হাতিয়েছে’ বলেও অভিযোগ করেন এম কে আনোয়ার।