পদ্মা সেতু প্রকল্পের খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করতে আগামী সপ্তাহে ঢাকা-কুয়ালালামপুর পুনরায় আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বলে মালয়শিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা বারনামা জানিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত বারনামার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় ৪-৬ অগাস্ট যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করবেন মালয়শিয়া সরকারের দক্ষিণ এশিয়ার অবকাঠামো বিষয়ক বিশেষ দূত সামি ভেলু।

সফরে স্যামি ভেলু পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি। তারা বলছে, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রস্তাব প্রায় চূড়ান্ত করেছে মালয়শিয়া এবং অগাস্টের মাঝামাঝিতেই তা বাংলাদেশকে দেওয়া হবে।

এর আগে তিনি বলেছিলেন, পদ্মা প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই তার বক্তব্য।

দেশের বহু প্রতীক্ষিত এই নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের জটিলতা সৃষ্টির পর মালয়শিয়া এতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখায়।

এনিয়ে গত এপ্রিলে কুয়ালালামপুরে মালয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের উপস্থিতিতে একটি সমঝোতা স্মারকও সই করেন ওবায়দুল কাদের।

এরপর গত ২৯ জুন দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার দাবি তুলে বিশ্ব ব্যাংক ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে ঋণ বাতিল করে। এই প্রকল্পে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল।

তবে বর্তমানে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে ৩৫০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে বারনামা জানিয়েছে। মালয়শিয়া সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্বে বুট পদ্ধতিতে এই সেতু নির্মাণ করতে চায়।

এর অর্থ হচ্ছে, সেতু নির্মাণের পর তারাই মালিক হয়ে এটি পরিচালনা করবে। লগ্নি করা অর্থ ওঠার পর তারা বাংলাদেশকে তা হস্তান্তর করবে।

সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর গত ২৮ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে খসড়া প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে মালয়শিয়া।

ওই প্রস্তাব পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “খসড়া প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করার পর প্রথমে আমরা নিজেদের মধ্যে প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করব, তারপর মালয়শিয়ার সঙ্গে আলোচনা করব।”

মালয়শিয়া সরকারের একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বারনামা জানিয়েছে, প্রকল্পের কারিগরি দিক ও বিনিয়োগের সব বিষয়ে কুয়ালালামপুর প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্যামি ভেলুর সফরকালে বাংলাদেশের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি পেলে তিনি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করবেন।

বারনামার খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশ রাজি হলে সেপ্টেম্বরেই পদ্মা সেতু নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি হবে। সেক্ষেত্রে অক্টোবরে সেতুর ভিত্তিস্থাপন করতে ঢাকায় আসবেন মালয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
মালয়শিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে যোগাযোগমন্ত্রী ইতোপূর্বে বলেছিলেন, প্রস্তাবটি গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এদিকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর ঘোষণা দিলেও সংস্থাটিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও বাদ দেয়নি সরকার।

বিশ্ব ব্যাংক ঋণ বাতিলের পরও ঋণদাতা দুই সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) তাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে।

এতে উৎফুল্ল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, “এটা আশা জাগিয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুশির খবর। এখন দেখা যাক বিশ্ব ব্যাংক কী করে। তবে আমার বিশ্বাস, বিশ্ব ব্যাংককে ফিরে আসতেই হবে।”