দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) রেকর্ড হয়েছে। ২০১১ সালে ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলারের এফডিআই। এটি এক বছরে আসা সর্বোচ্চ এফডিআই বলে জানিয়েছে বিনিয়োগ বোর্ড। আগের বছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা বিশ্ব এফডিআইয়ের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি। ২০১১ সালে বিশ্বে এফডিআইয়ে গড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ।
ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইউএনসিটিএডি) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০১২ সালে বিনিয়োগের এই চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার বিনিয়োগ বোর্ডের (বিওআই) সম্মেলনকক্ষে ইউএনসিটিএডির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম ইসমাইল হোসেন রিপোর্টটি উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিওআই চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিওআই নির্বাহী সদস্য বিভাস চন্দ্র মণ্ডল প্রম?ুখ।
গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ আসে ৬৬ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার। পরের বছর বিনিয়োগ হয় ১০৮ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে এফডিআই নেমে আসে ৭০ কোটি ১ লাখ ডলারে। পরের বছর তা কিছুটা বেড়ে ৯১ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। ২০১১ সালে এফডিআই বাড়ে ২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
২০১১ সালে শুধু বাংলাদেশেই এফডিআই বাড়েনি, গোটা বিশ্বেই তা বেড়েছে। আর গড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ শতাংশ। ইউএনসিটিএডি অনুসারে ২০১১ সালে বিশ্বে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, আগের বছর যা ছিল ১ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। রিপোর্ট উপস্থাপনকালে এম ইসমাইল হোসেন বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল। সে অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে। তবে ২০০৭ সালের অবস্থানে যেতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।
বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, সরকার ঘন ঘন ট্যাক্স নীতিমালার পরিবর্তন করে, যা বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা। তারপরও বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রচুর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। ২০১১ সালের বিনিয়োগচিত্রে এরই প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, ২০১১ সালের সমপরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এর আগে আর আসেনি।
তিনি জানান, সর্বশেষ ২০০৮ সালে ১০৮ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল, যার মূল কারণ ছিল টেলিকম খাতে বিদেশি বিনিয়োগ। ওই বছর টেলিকম খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৬০ কোটি ডলার।
গত বছর দেশে আসা বিনিয়োগের মধ্যে ২৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার এসেছে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে। এছাড়া ব্যাংক খাতে ২৪ কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলার, জ্বালানি খাতে ২৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং টেলিকম খাতে ১৮ কোটি ৯ লাখ ডলার এসেছে।
বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে মিসর থেকে, ১৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এরপর আছে যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, জাপান ও ভারত।
তবে টেলিকম খাতে ২০১০ সালের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। ওই বছর ৩৫ কোটি ৯৮ লাখ ডলার এলেও ২০১১ সালে এসেছে ১৮ কোটি ৯ লাখ ডলার।
আলোচ্য সময়ে সামগ্রিক বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট কমেছে ১৬ শতাংশ। ২০১০ সালে এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫১ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১১ সালে তা কমে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে নেমে গেছে। তবে পুনর্বিনিয়োগ ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ডলার থেকে ৩৪ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ২০১১ সালে ৪৮ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে।