জনগণের কাছে সরকারের দেয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি সময়মতো বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ। এছাড়া সরকারের ভর্তুকি কমানোর পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল সচিবালয়ে আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় তিনি বলেন, আইএমএফ ভর্তুকি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছে। আমরা এরই মধ্যে ভর্তুকি কমানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছি শুনে তারা প্রশংসা করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ভর্তুকি কমানোর জন্য ১০টি উপায় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অবশ্যই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বাড়াতে হবে। তবে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা কোন কৌশল অবলম্বন করব সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। ভর্তুকি কমানোর জন্য এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হলেও মূল্যস্ফীতি কমবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনে ভর্তুকি বড় ধরনের প্রভাব রাখছে। ভর্তুকি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। অন্যদিকে সরকারি খাতে বাড়তি ঋণ আসায় বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে পারছে না। এছাড়া ঋণের সুদের হারও বাড়ছে। এ অবস্থায় ভর্তুকি কমিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হলে তা মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ তখন সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, আইএমএফের আইন অনুযায়ী প্রতিবছরই সংস্থাটি ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের অংশ হিসেবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এরই অংশ হিসেবে মিশনটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে। আইএমএফ প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার নিয়ে সবসময়ই একটু কৃপণতা দেখালেও বাংলাদেশ যে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছে, তা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মিশন মন্তব্য করেছে।
মুহিত বলেন, এতদিন আমাদের রিজার্ভের অর্থ দিয়ে ৫-৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তবে লেনদেনের ওপর চাপ বাড়ায় ভবিষ্যতে তা কমে যাবে বলে আইএমএফ সতর্ক করেছে। বাজেটে ভর্তুকির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তা যৌক্তিক উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ভর্তুকির হিসাব স্ফিত হচ্ছে। আইএমএফ এ বিষয়ে নজর দিতে বলেছে। আমরা তাদের জানিয়েছি যে, একমাস ধরে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তবে মনমোহন সিংয়ের সফরসহ নানা কারণে এতদিনেও তা কমানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু করা সম্ভব হয়নি।
ইসিএফ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে ভারসাম্যের কারণে নয়, বরং আমদানি অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্যই এটি আমাদের প্রয়োজন। ২০১০ সালের মাঝামাঝিতে কোরিয়া সফরের সময়ও আইএমএফকে এ বিষয়ে বলেছি। কিন্তু তখন আমদানি অর্থায়নের বিষয়টি এতবেশি চাপে ছিল না। কিন্তু এখন আমাদের তা প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, ইসিএফের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাগজপত্র ওয়াশিংটনে পাঠাতে। তবে তাদের প্রক্রিয়া অনেক লম্বা। তাই চলতি অর্থবছরে তা পাওয়া সম্ভব হবে না। ইসিএফের সঙ্গে বাজেট সহায়তা বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আমি নিজে বাজেট সহায়তা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে কথা বলেছি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গেও কথা বলব।
অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি বছরেই সরকারের বিনিয়োগের হার ২০ শতাংশে উন্নীত হবে। ১৫ শতাংশ সরকারি বিনিয়োগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে এ হার ১৭ শতাংশে পেঁৗছেছে। এ সময় অর্থমন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।