হরতাল, অবরোধ আর ধর্মঘটের জনপদ হিসাবে বিশ্বজুড়ে কুখ্যাতি বাংলাদেশের। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম এ বদ্বীপেই ঘটে চলেছে নীরব অর্থনৈতিক বিপ্লব। যুদ্ধবিধ্বস্ত, দারিদ্র্যপীড়িত আর প্রকৃতির ভয়াবহ রোষের শিকার বাংলাদেশ স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৪১ বছরের প্রান্তে অনেক হিসাব-নিকাশ ভবিষ্যদ্বাণী বদলে দিয়েছে। বদলে গেছে তলাহীন ঝুড়ির কথিত ভাবমূর্তিও। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব মতে, ১৬ কোটি জনসংখ্যার এ ভূখ- এখন বিশ্বের ৫৬তম অর্থনৈতিক শক্তি। অর্থনীতির বিদ্যমান ধারা বজায় থাকলে আর ৪০ বছর পর রাষ্ট্রটি বিশ্বের ৩০টি প্রধান অর্থনীতির মধ্যে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন, পর্যুদস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা, শূন্য খাদ্য ভা-ার ও মুদ্রা তহবিল, ভেঙ্গে পড়া প্রশাসন, হাজার হাজার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং তিন লাখ বীরাঙ্গনার পুনর্বাসন, বৈরি আন্তর্জাতিক পরিবেশ, বিধ্বস্ত কল-কারখানা_এসবই সঙ্গী ছিল চার দশক আগে পৃথিবীর মানচিত্রে জেগে ওঠা সার্বভৌম-স্বাধীন বাংলাদেশের। ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে আসা রাষ্ট্রটির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দক্ষ হাতেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন। গড়ে দেন বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি। মাত্র সাড়ে তিনবছরের মাথায় পিতাকে হত্যা করে জলপাই রঙের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় অপার সম্ভাবনা নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বিশ্বের প্রথম জাতি-রাষ্ট্র। এরপর ট্যাঙ্ক রুখে দাঁড়ায় ট্রাঙ্ককে, সামরিক কর্মকর্তারা নিজেদের হত্যার খেলায় মেতে ওঠে, অরক্ষিত-উন্মুক্ত মসনদ দখলে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত হয় ২২টি ক্যু। হত্যাযজ্ঞের এই বিভৎস নীতিহীনতায় প্রায় ১৩শ’ সামরিক কর্মকর্তা প্রাণ হারান, যাদের একটি বড় অংশ স্বাধীন রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে যুদ্ধ করেছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১’র রক্তাক্ত অধ্যায়, তারপর আপাত ঝঞ্ঝাহীন ৯ বছরের নিরুত্তাপ সামরিক শাসন। এসময় ক্যান্টনমেন্টের আয়তন বেড়েছে কয়েক গুণ, সামরিক সদস্যদের সুযোগ-সুবিধাও স্ফীত হয়েছে, কিন্তু যা বাড়েনি, যা ভয়াবহ আর্তনাদের বিষয়, তা হলো_অর্থনীতির আয়তন। সত্তর ও আশির দশকজুড়ে মোট দেশজ উৎপাদন (জিপি)-এর বৃদ্ধি ছিল মাত্র ২ থেকে আড়াই শতাংশ। জেনারেলদের রক্ত খচিত শাসনামলে জনগণের মাথা পিছু আয় বেড়েছে এক শতাংশ হারে, যা এখন ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে নীরব বিপ্লব হয়েছে এবং হচ্ছে তা মূলত শুরু হয় ১৯৯০ এর পর দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, অদক্ষতা, আর সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত রাজনীতিবিদরা গত দুই দশকে হয়তো আমাদের ‘কল্পিত স্বর্গ’ উপহার দিতে পারেনি; তবে তা নিশ্চিতভাবে সেনা শাসিত সেই জলপাই রঙের অন্ধকার আর নরক থেকে মঙ্গলজনক ছিল। কাঙ্খিত মাত্রায় না হলেও গণতন্ত্রের কল্যাণে বিকশিত হয়েছে বেসরকারী খাত। সাড়ে তিন কোটি টন শস্য ফলাচ্ছেন কৃষকরা। ব্যক্তি উদ্যোগে বিদেশ গিয়েছেন প্রায় ৮০ লাখ বাঙালি। পাঁচ বছরের ব্যবধানে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ী অর্থ বছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। সারা বিশ্বে এফডিআইর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ ধাপ এগিয়েছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ বৈদেশিকি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন দ. এশিয়ায় দ্বিতীয়। এ সবই স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে এক দশকের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে। মানব উন্নয়ন মানব উন্নয়ন তথা সামাজিক খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য চীন কিংবা ভারতের সঙ্গে তুলনায়। কিছুক্ষেত্রে আরো সন্তোষজনক। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল চারটি, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৩৪টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৪টি। উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। চার দশকে স্বাক্ষরতার হার ১৭ শতাংশ বেড়ে ৬৫ শতাংশ হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ের ভর্তি হার বেড়ে ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অবৈতনিক শিক্ষা, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বেসরকার খাতের বিকাশ, সচেতনতার প্রসার সর্বোপরি গণতন্ত্রের চর্চা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গীকারের ফলশ্রুতিতে মানব উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত শিক্ষার বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। আমদানি-রপ্তানি খাত স্বাধীনতার চার দশক পর বাংলাদেশে রপ্তানি খাতের বিশাল রূপান্তর ঘটেছে। পাটের বদলে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ রপ্তানি আয় আসছে পোশাক শিল্প থেকে। ১৯৭২ সালে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭০ ভাগ ছিল পাটের দখলে। কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারের ফলে ‘৭০-এর দশকেই পাটের চাহিদা মারাত্মকভাবে কমে যায়। ১৯৮০-এর দশকে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে শ্রমঘন পোশাক খাত। এছাড়াও তামাক, চামড়া, জাহাজ, চা, চিংড়ি, অপ্রচলিত পণ্য (কাকাড়, ফুল, সবজি, বেত প্রভৃতি) প্রভৃতি রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। পণ্য রপ্তানির এই বৈচিত্র ও পোশাক রপ্তানির বিভিন্ন বাজারের জন্য মন্দার মাঝেও অনেকটা স্বাভাবিক আছে দেশের রপ্তানি খাত। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মূলত পোশাক শিল্প খাতের উপর নির্ভরশীল। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। এই উচ্চ নির্ভরতা রপ্তানি বহুমুখিতার সঙ্কীর্ণতাকে নির্দেশ করে, যা বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিকূলতায় অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রপ্তানি বহুমুখীকরণের (পণ্য এবং বাজার) জন্য অধিক প্রচেষ্টা এবং সুযোগসুবিধা প্রদান অতি প্রয়োজনীয়। বর্তমান উৎপাদনশীলতা এবং প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কল্যাণের বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষভাবে সজাগ থাকতে হবে এবং কোনোভাবেই যেন শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি না পায় সেজন্য সরকার এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষ সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিটেন্স সত্তরের দশকে দেশে ১ বিলিয়ন ডলারেরও কম মুদ্রার রিজার্ভ ছিল। তা এখন বেড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একশ ভাগ কৃতিত্বই প্রবাসী শ্রমিকদের। ১৯৮০ এর দশকে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে বেকার শ্রমিক ছদ্ম বেকার কৃষক, পুঁজি হারানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিজস্ব উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্য যেতে থাকে। ১৯৯০ এর পর তা মিছিলে রূপ নেয়। যে ধারা এখনো বিদ্যমান। প্রায় ৮০ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের অর্থে বাংলাদেশ মেটায় তার আমদানি চাহিদা। গত তিন বছরে প্রায় ১৫ লাখ শ্রমিক বিদেশ গিয়েছে। কেবল বাংলাদেশ নয়; বিশ্বেও তা এক রেকর্ড বটে। প্রবাসী নাগরিকদের প্রেরিত আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে পঞ্চম, কিন্তু প্রবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা বিচারে তা ভারতের পরেই দ্বিতীয়। এর সহজ অর্থ, বাংলাদেশের শ্রমিকরা বিশ্ব বাজারে নিজেদের চাহিদা তৈরি করেছে; দেশের বাইরেও নিজেদের বিশাল কর্মক্ষেত্রে তৈরি করেছে। ২০০২-০৪ পর্যন্ত প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত তিন বছরে প্রায় ১৫ লাখ নতুন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০০৩-০৪ অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ যেখানে ২.৭১ বিলিয়ন ডলার ছিল সেখানে ২০১০-১১ শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারে। খাদ্য উৎপাদন ও পর্যাপ্ততা স্বাধীনতার পর খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। গত চার দশকে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক পরিসংখানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে মোট খাদ্য উৎপাদন ছিলো ১০.৪৬ মিলিয়ন টন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১১ মতে, গত অর্থবছরে মোট খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৩৪১.১৩ মিলিয়ন টন। উচ্চ ফলনশীল বীজ, নিবিড় সেচ, উন্নত প্রযুক্তি, রাসায়নিক সারের ব্যবহার ফসল উৎপাদনে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ক্ষুদ্র কৃষকদের প্রচেষ্টা ও বাংলাদেশের সরকারের অব্যাহত সহযোগিতা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হসাব অনুযায়ী, ২০০৯-১০ খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয়েছিল ৩৪১.১৩ লাখ মেট্রিক টন। তন্মধ্যে, আউশ ১৭.০৯ মেট্রিক টন, আমন ১২২.০৭ মেট্রিক টন, বোরো ১৮৩.৪১ লাখ মেট্রিক টন, গম ৯.৬৯ মেট্রিক টন। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর এর হিসাবমতে ২০১০-১১ অর্থবছরে খাদ্য শস্যের মোট উৎপাদেন লক্ষ্যমাত্রা ৩৭০.৪২ লক্ষ মেট্রিক টন। এ বছর গম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১০.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০১২ মতে, দেশের মোট খাদ্যশস্যের ৫০ ভাগ বরো ধান, আমন- ৩৬%, আউস- ৭%, ভুট্টা- ৪% এবং গম ৩% । বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে মূলত বরো ধানের কল্যাণে। গ্রীষ্ম মৌসুমে চাষকৃত বরো ধানের ব্যাপক উৎপদান শুরু হয় মূলত ১৯৮০ এর দশকে। বন্যা, ঝড়, অতিবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে অনেকটা মুক্ত বরো ধান বাংলার কৃষকের কাছে আশীর্বাদ হিসাবে পরিগণিত। কেননা অতীতে বর্ষা মৌসুমের ধানের একটি বড় অংশ বন্যায় নষ্ট হয়েছে। অতীতে বাংলাদেশের খাদ্য চাহিদার একটি বড় অংশ বৈদেশিক খাদ্য সাহায্য বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের চখ-৪৮০- এর আওতায় আসতো। কিন্তু বর্তমানে অল্প কিছু সামাজিক কর্মসূচিতে সাহায্য ছাড়া দেশে তেমন খাদ্য সাহায্য আসে না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭২ সালে মোট খাদ্য শস্য উৎপাদনের ১৩ ভাগ ছিলো খাদ্য সাহায্য। ২০০০ সালে তা নেমে ৩ শতাংশে দাঁড়ায়। বর্তমানে মাত্র দুই লাখ টন খাদ্য শস্য সাহায্য হিসাবে আসছে। দারিদ্র্য হ্রাস ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি গত তিন দশকে দারিদ্র হ্রাসে চীন, ভারত ও ভিযেতনামের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। দারিদ্র্য আর অপুষ্টি বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী। অন্তত হাজার বছরের ইতিহাস তাই বলে। ‘সোনার বাংলার’ মিথ বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিগঠনে ভূমিকা রেখেছে বটে, তবে তার কোনো ঐতিহাসিক সত্যতা নেই। ফিবছর অনাহার, দুর্ভিক্ষ আর দুর্যোগের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় কাদাজলের উর্বর ভূমিতে তাম্রবর্ণের বাঙালি দীর্ঘকালই সংগ্রাম করছে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। মুক্তযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ এ জনপদকে আরো বীভৎস বাস্তবতার দিকে ঠেলে দেয়। মহাত্মা গান্ধীর ভাষায় ‘এক অদৃশ্য জীবনীশক্তি আর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এ জনগোষ্ঠীকে দিয়েছে লড়াইয়ের অদ্ভুত ক্ষমতা।’ ১৯৭২ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ ভাগ। চার দশকের ব্যবধানে তা কমে ৩৫ শতাংশে নেমেছে। এসময়ে চরম দারিদ্র্যের হার ৫০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অবশ্য দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। দারিদ্র্য হার হ্রাসে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি। বিশ্বের মাত্র ২৪টি রাষ্ট্র গত এক দশক ৬ শতাংশের কাছাকাছ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির জন্য কর্মসংস্থান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি পণ্যের বা খাদ্য শস্যের উৎপাদন গত তিন দশকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেলেও কৃষি খাতের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়নি। অন্যদিকে শিল্পখাতের অবদান জিডিপিতে বৃদ্ধি পেলেও সে হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়নি। এজন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। বর্তমানে জিডিপিতে এ খাতের অবদান হচ্ছে মাত্র ৩ শতাংশ বা তারও কম। এ খাতের বাস্তবায়নে অল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণের সরবরাহ নিশ্চিতকরা জরুরি। দরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের সমপ্রসারণ এবং নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া। তবে কেবল সম্ভাবনা নয়; অসংখ্য চ্যালেঞ্জ আর চোরাগোপ্তা ফাঁদ রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচনী সহিংসতা আর ট্যাঙ্কের শাসনের ভয় আতঙ্কিত করছে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের। আছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ১৭ ভাগ ভূমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও। অব্যাহতভাবে কমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর; আন্তর্জাতিক নদীর পানি সন্ত্রাসী কায়দায় প্রত্যাহার করছে চীন-ভারত। এর ফলে হুমকিতে পড়তে পারে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।