বাজেটে ডেভেলপারদের উৎস আয়কর বৃদ্ধিতে নতুন করে সংকটের মুখে পড়বে আবাসন খাত। এছাড়া সোলার প্যানেল ব্যবহারের শর্ত, শেয়ার বাজারে ধস ও ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে আবাসন ব্যবসায় চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে গৃহায়ণ শিল্পের ব্যবসায়ীদের ওপর ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায় ফ্লোর স্পেস হিসেবে আবাসিক ভবনে প্রতি বর্গমিটারে ২ হাজার টাকা এবং বাণিজ্যিক ভবনের জন্য প্রতি বর্গমিটারে ২০ হাজার টাকা। ধানম-ি, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কাওরান বাজার। চট্টগ্রামের খুলশী, আগ্রাবাদ, পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ এলাকায় আবাসিক ভবনের জন্য প্রতি বর্গমিটারে ১ হাজার ৮০০ টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ১৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সব এলাকায় আবাসিক ভবনের জন্য প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা হারে আয়কর প্রস্তাব করা হয়েছে।
রিহ্যাব সহসভাপতি মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, এ খাতের অনিশ্চয়তার কারণ জমির ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সেবাদাতা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, ব্যাংকঋণে উচ্চমাত্রার সুদহার ও ভবনের নকশা অনুমোদনে জটিলতা।
রিহ্যাব নেতারা অভিযোগের সুরে বলেন, বিগত ২০০৯-১০ সালের বাজেট ঘোষণায় উলি্লখিত আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতি বর্গমিটার ২৫০ টাকা। অতঃপর গত ২০১০-১১ সালের বাজেট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের উৎসে আয়কর সংগ্রহের হার সর্বোচ্চ ৮ গুণ বৃদ্ধি করে প্রতি বর্গমিটারে এলাকা ভেদে ২ হাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ফলে বিগত এক বছরে সব ধরনের ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। বিভিন্ন সময়ে এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বাস দেয়া হয় যে, আসন্ন জাতীয় বাজেটে এ হার কমানো হবে; কিন্তু ঘোষিত বাজেটে এই হার না কমিয়ে বরং বাণিজ্যিক ভবনে বিদ্যমান হার এলাকাভেদে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এটা গৃহায়ন শিল্পের জন্য হতাশাব্যঞ্জক।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে এ খাত ১৫ শতাংশ ভূমিকা রাখে। বিগত এক বছর ধরে বাংলাদেশের গৃহায়ন শিল্প নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চমূল্য, উৎসে আয়করের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগে অচলাবস্থা, শেয়ার মার্কেটে ধস, ব্যাংক ও অন্যান্য অর্থলগি্নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারল্য সংকট ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাত দীর্ঘকালীন মন্দাবস্থায় প্রবেশ করে। ইতিমধ্যে অনেক বিনিয়োগকারী এ শিল্প পরিত্যাগ করেছেন। এ অবস্থায় উৎসে আয়করের হার বৃদ্ধি অযৌক্তিক। অথচ এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এই বাজেটে বরং বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে আয়কর ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার ফলে বাংলাদেশের আবাসন খাত পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়বে।
উৎসে আয়করের বিদ্যমান ও প্রস্তাবিত উচ্চ হারের কারণে রিয়েল এস্টেট খাতে তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে যেসব প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে সেগুলো হল_ প্রস্তাবিত উৎস করের বৃদ্ধির ফলে যেসব প্রকল্প ইতিমধ্যে বিক্রয় হয়ে গেছে এবং সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে।
বর্তমানে স্থবির রিয়েল সেক্টরে আয়কর বৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাট বিক্রয় আরও হ্রাস পাবে। সাধারণ মানুষের বাসস্থান সংস্থান চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে প্রকল্প নির্মাণ কমে যাবে যা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।