টম ব্রুকের কথা এখন কেউ কি জানেন? না জানলেও ক্ষতি নেই। শুধু এটুকু জেনে রাখুন, ইতিহাসের পরিক্রমায় যে পথ এ অ্যাথলেট তৈরি করে গিয়েছিলেন, সেই পথেই আজ দৌড়াবেন জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট। ১৮৯৬ সালে এথেন্সে বসেছিল আধুনিক অলিম্পিকের প্রথম আসর। সেই আসরে পুরুষদের ১০০ মিটারে জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের টম ব্রুক। তিনিই অলিম্পিকের ইতিহাসে শতমিটারের প্রথম চ্যাম্পিয়ন। সময় নিয়েছিলেন ১১.৮০ সেকেন্ড। সেই টাইমিং শতাব্দী পেরিয়ে বোল্ট দুই সেকেন্ডের বেশি কমিয়ে এনেছেন। ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে এ জ্যামাইকান মেগাস্টারই এখন এ গ্রহের দ্রুততম মানব। আজ লন্ডন অলিম্পিকে তার সেই শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষায় নামবেন বোল্ট। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন চার তারকা। জ্যামাইকারই ইয়োহান ব্লেক ও আসাফা পাওয়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাইসন গে ও জাস্টিন গ্যাটলিন।
১০০ মিটারের ইতিহাসের বাঁকে অনেকেই নায়কের মর্যাদা পেয়েছেন। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টারদেরই পাল্লা ভারি। এখনও পর্যন্ত অলিম্পিকে পুরুষদের শতমিটারে ২৭ বারের মধ্যে মার্কিন অ্যাথলেটরাই জিতেছেন ১৭ বার। তার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কার্ল লুইসই টানা দুটি অলিম্পিকে ১৯৮৪ এবং ১৯৮৮ সালে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। সেই রেকর্ড ছোঁয়ারই হাতছানি বোল্টের সামনে। যিনি বেইজিংয়ের পর লন্ডনেও সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নামছেন।
১৯৮১ সালে একটি ছবি হিট করেছিল। ‘চ্যারিয়টস অফ ফায়ার’। গল্পটা ছিল ব্রিটেনের হ্যারল্ড আব্রাহামসকে নিয়ে।
-কে তিনি?
আব্রাহামসই প্রথম ইউরোপিয়ান অ্যাথলেট যিনি ১৯২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকে শতমিটারে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন ১০.৬০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। ১৯৩২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এডি টোলান বিশ্বরেকর্ড গড়েন ১০.৩৮ সেকেন্ডে। কিন্তু চার বছর পর বার্লিন অলিম্পিকে নায়ক হয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের জেসি ওয়েন্স। শতমিটারসহ অ্যাথলেটিক্সে মোট চারটি স্বর্ণপদক জিতে। ১৯৫২ সালে হেলসিংকি অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো শুরু হয় ইলেকট্রনিক টাইমিং। আর ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিকে শেষবারের মতো অ্যাথলেটিক্সে ব্যবহূত হয় কাঠ-কয়লার গুঁড়া, পাথর মিশ্রিত সিন্ডার ট্র্যাক। ১৯৬৮ সালে মেক্সিকো অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো ব্যবহূত হয় সিনথেটিক ট্র্যাক। শতমিটারে নতুন যুগের সূচনাও তখন। সেবারই যুক্তরাষ্ট্রের জিম হাইন্স শতমিটার দৌড়ান ৯.৯৫ সেকেন্ডে। ১০ সেকেন্ডের নিচে প্রথম টাইমিং। সেটাই এখন বোল্টদের কাছে ডাল-ভাতের মতো।
হাইন্সের সেই রেকর্ড অবশ্য টিকেছিল ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। তারপরই শুরু কার্ল লুইস, বেন জনসন অতঃপর লেরয় বুরেল, ডোনাভান বেইলি, মরিস গ্রিনদের যুগ। গত ২০ বছরে অলিম্পিকে শতমিটারে স্বর্ণপদক জিতেছেন ছয়জন স্প্রিন্টার। তার মধ্যে অবশ্য জনসন বাদ। ১৯৮৮ সালে তার স্বর্ণ কেড়ে নিয়ে দেওয়া হয় লুইসকে। তারা সবাই শতমিটার দৌড়েছেন ১০ সেকেন্ডের নিচে। কিন্তু সমস্যা হল, এ সময়টাতে ড্রাগ কেলেঙ্কারিও জড়িয়ে গেছে স্প্রিন্টের এই অভিজাত ইভেন্টিতে। ২০০৪-এ এথেন্সে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন গ্যাটলিন। কিন্তু ডোপপাপে তিনি চার বছর নিষিদ্ধ ছিলেন। শাস্তি শেষে তিনিও আজ বোল্টের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।
বোদ্ধাদের ধারণা, বোল্টদের এ রেস হবে শতাব্দীর সেরা ১০০ মিটার। সেরা তারকাদের সবারই সেরা টাইমিং ১০ সেকেন্ডের নিচে। এমনও হতে পারে চূড়ান্ত আটজনই দৌড়াতে পারে ১০ সেকেন্ডের নিচে। আর তাই যদি হয়, তাহলে সেটা হবে অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো।
তাতে কোথায় থাকবেন বোল্ট? তিনি কি পারবেন নিজেকে কিংবদন্তিদের সারিতে তুলে আনতে? নাকি নতুন কোনো নায়কের আবির্ভাব হবে।
তারা যা বলেছেন
বোল্ট : আমি তৈরি। নামব জেতার জন্যই।
ব্লেক : আকাশ ছোঁয়াই আমার লক্ষ্য।
পাওয়েল : খালি হাতে ফিরব না।
গে : আমার হূদয় পদক চাইছে।
গ্যাটলিন : আমি এখনও ফুরিয়ে যাইনি।