প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জরুরি অবস্থা সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ চায় না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলের আশঙ্কার মধ্যে বুধবার নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ফলে এখন নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে বিরোধী দল।

২০০৭ সালের মতো জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে অনির্বাচিতদের ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করতেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যে কারণে ওয়ান-ইলেভেন এসেছিল, তেমন কোনো পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশকে আমরা ঠেলে দিতে চাই না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং তা অক্ষুন্ন রেখেই রাজনৈতিক অঙ্গনে অবস্থান করতে চাই।”

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনীতিকদের নির্যাতনের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই না, কেয়ারটেকার সরকারের নামে দানবের আগমন ঘটুক এবং দেশের অসহায় ব্যবসায়ী-পেশাজীবী এবং রাজনীতিকদের নির্যাতন করুক।”

বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল) টাইমস স্কোয়ার সংলগ্ন মারিয়ট মার্কেস হোটেলের বলরুমে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এসেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে তিনি সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দেয়া এই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও বক্তব্য রাখেন।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক একটি নৌকার ওপর বিশাল মঞ্চে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। বক্তব্যে তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের অর্জন তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার কথাও বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “ওয়ান-ইলেভেনে গঠিত কেয়ারটেকার সরকারের চালিকাশক্তি জেনারেল মইন প্রেসিডেন্ট হয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিলেন।

“জেনারেল মইনের খায়েশ হয়েছিল রাষ্ট্রপতি হওয়ার এবং অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার। তার সে অভিলাষ পূরণে সহায়ক একটি ফতোয়া দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন আইনজীবী। সেই আইনজীবী বলেছিলেন যে, কেয়ারটেকার সরকার কতদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, সেটি নেই সংবিধানে।”

“কিন্তু প্রবাসে সৃষ্ট তুমুল আন্দোলন এবং দেশের ভেতরের গণরোষ তার সে আকাক্সক্ষা সফল হতে দেয়নি,” বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করায় দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি রয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত সাড়ে ৩ বছরে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদের কয়েকটি উপ-নির্বাচনের দিকে গভীরভাবে মনোযোগ দিলেই অনুধাবন করা সম্ভব হবে যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব ছিল না।”

“আগামী সাধারণ নির্বাচনেও ভোটারের মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটবে, এতে কারো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের রেজাল্ট পাল্টিয়েছে, এমন নজির অনেক রয়েছে। কিন্তু মহাজোট সরকারের আমলে তেমন ঘটনা ঘটেনি,” বলেন তিনি।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এমন একটি পরিবেশে করতে চাই, যেখানে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থাকবে না, লোডশেডিং থাকবে না, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরমতসহিষ্ণুতা বাড়বে।”

বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “গত পৌনে চার বছরে আমরা ৫৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছি। আরো ২৩টি নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পথে। তাহলে বিএনপি কি এগুলো গুঁড়িয়ে দেবে?

“প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন এবং ১৩ হাজার কমিউনিটি হেল্থ সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলোও কি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে? তাহলে কি আবার হাওয়া ভবন এবং খোয়াব ভবন খোলা হবে?”

মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমার বিরোধের মামলায় জয়ের তথ্য তুলে ধরে আগামীতে ভারতের সঙ্গে বিরোধেও একই ফল আশা করেন শেখ হাসিনা।

প্রবাসীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের পাঠানো রেমিট্যান্স হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম চালিকা শক্তি। রেমিট্যান্স এবং দক্ষ প্রশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব মন্দা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”

সজীব ওয়াজেদ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কম্পিউটারের অভাব পূরণ হয়েছে গোটা দেশে। দুর্গম অঞ্চলের লোকজনকেও এখন আর শহরে যেতে হয় না।

“এভাবেই বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংক ফিরতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, আমরা দুর্নীতি করিনি,” বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য ক্যারলিন মেলনী, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা জি বোকোভাও উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, আকতার হোসেন, আব্দুস সামাদ আজাদ, নজমুল ইসলাম, এন আমিন, নূরনবী কমান্ডার, জাকারিয়া চৌধুরী, ইমদাদুর রহমান চৌধুরী, শাহীন আজমল প্রমুখ।