একজন বিশ্বমানের স্পিনার হিসেবে তার কাছ থেকে জানা ও বোঝার এবং শেখার আছে অনেক কিছু। বিশ্বসেরা উইলোবাজদের কাকে কীভাবে বধ করতে হয় তা তার ভালোই জানা। বাঁহাতি লেগি কিংবা অফ স্পিনার-যে কোনো স্পিনারের জন্যই সাকলাইন মুশতাক হতে পারেন আদর্শ শিক্ষক। কার্যকর উপদেষ্টা। তারপরও অফ স্পিনার সাকলাইন মুশতাকের কাছ থেকে অফ স্পিনাররাই বেশি উপকৃত হতে পারেন। যদিও ঢাকায় পা রেখেই তিনি বলেছেন, বাঁহাতি স্পিনারদেরও সমান শিখাতে পারবেন তিনি। কতটা পারবেন? তা বলে দেবে সময়। তবে দেশসেরা বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান আশাবাদী। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বিশ্বাস, সাকলাইনের সান্নিধ্যে সব স্পিনারই হতে পারেন লাভবান।
মঙ্গলবার রাজধানীতে পা রাখলেও গতকালই শেরেবাংলার পাশের ইনডোরে প্রথম প্রাকটিস সেশন করেছেন পাকিস্তানের সাবেক এ স্পিনার। আর সবার সঙ্গে সে অনুশীলনে ছিলেন সাকিবও। এ বাঁহাতি স্পিনারের মূল্যায়ন-সাকলাইনের মতো বিশ্বমানের অফ স্পিন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছুই। এ সত্য উপলব্ধি করা সাকিবের সহজ সরল উচ্চারণ, ‘সাকলাইন মুশতাককে স্পিন উপদেষ্টা হিসেবে পাওয়ায় আমরা উপকৃত হব। কারণ তিনি উপমহাদেশের মানুষ। যার আমাদের দেশে ও সঙ্গে খাপ খাওয়াতে মোটেও কষ্টকর হবে না। তেমন সময়ও লাগবে না। তিনি পাকিস্তানের একজন অসাধারণ অফ স্পিনার ছিলেন। তার কিছু অসাধারণ ডেলিভারি ছিল। অফ স্পিন করাতে পারতেন অবলীলায়। অফ স্টাম্পের বাইরে বল ফেলে মিডল স্টাম্প উপড়ে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানকে বোকা বানিয়েছেন অনেকবার। সেসব শিখতে পারলে আমাদের বোলিং আরও শক্তিশালী এবং ধারালো হবে।
সাকিব সময়কে মানদণ্ড মানতে নারাজ। তার ব্যাখ্যা, ‘চার মাস খুব বেশি সময় নয়। আবার চার বছরও তেমন বেশি সময় নয়। আসল কথা হচ্ছে ট্রেনিং শিডিউলটা কেমন হবে; তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা তার কাছ থেকে কতটা কী শিখতে পারব। আমার বোলিং নিয়ে কিছু চিন্তা আছে। আশা করছি সাকলাইনের সঙ্গে আলাপ করব। তার পরামর্শমতো পরিকল্পনা করে এগোব।’
বাংলাদেশে মানসম্পন্ন অফ স্পিনার কম। এই মুহূর্তে জাতীয় দলে যারা আছেন তাদের মধ্যে মাহমুদউল্লাহই এগিয়ে। স্পিন উপদেষ্টা হয়ে আসা এ পাকিস্তানি গ্রেটের কাছ থেকে অফ স্পিনের সবরকম কায়দা-কৌশল শিখতে তাই উন্মুখ মাহমুদউল্লাহ। তার খেলোয়াড় জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিলে বাংলাদেশের ক্রিকেট উপকৃত হবে।’
পাশাপাশি একই অ্যাকশনে লেগ স্পিনও করতে পারতেন। যা ‘দুসরা’ নাম পেয়েছে। তাকে ধরা হয় দুসরার আবিষ্কারক। একজন অফ স্পিনার হিসেবে সাকলাইনের কাছ থেকে বাড়তি টার্ন ও দুসরার কায়দা-কৌশল শেখার আশায় মাহমুদউল্লাহ। আর সে কারণেই মুখে এমন সংলাপ-‘অবশ্যই আমি দুসরা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করব। তিনি মাত্রই কাজ শুরু করলেন। যত সময় গড়াবে তত তার কাছে যাওয়ার ফুরসত মিলবে। আমিও তার কাছ থেকে দুসরা সম্পর্কে জানব। কী করে দুসরা ছোড়া হয় তা শিখব।’
কী করে বাড়তি টার্ন করানো যায়-প্রথম দিন অনুশীলনে সাকলাইন স্পিনারদের বল ধরে তা দেখিয়েছেন। আবার কোন গ্রিপে বোলিং করলে স্পিনে বৈচিত্র্য আনা যাবে তাও দেখিয়েছেন। এমন স্পিন উপদেষ্টার সাহচর্য এবং প্রয়োজনীয় বুদ্ধি ও পরামর্শে বোলিংয়ের পরিবর্তন আসবে-এ উপলব্ধি ভেতরে মাহমুদউল্লাহর। আর সে কারণেই মুখে বলেছেন, ‘আসলে আমাকে কাজ করতে হবে। তার কাছ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য নেব। তিনি সবসময়ের অন্যতম সেরা অফ স্পিনার। নিজের বোলিং সমৃদ্ধ ও ধারালো করতে তার কাছ থেকে যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় বুদ্ধি ও পরামর্শ চাইব।’
ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রথম দিনের সেশনে খেলোয়াড় জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন সাকলাইন। তার সময়ে ভারতের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। কতটা চাপ সামলাতে হয়েছে। কী করে তা সামলাতে হয় তাও জানিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহর আশা সামনের চার মাসে অনেক কিছুই শেখা সম্ভব। তার ভাষায়, ‘লাইন ও লেংথে তেমন সমস্যা না থাকলেও টার্নে ঘাটতি পরিষ্কার। বৈচিত্র্যও কম।’
দেখা যাক জাত অফ স্পিনার সাকলাইন মুশতাকের সাহচর্য ও বুদ্ধি এবং পরামর্শে মাহমুদউল্লাহর কতটা উন্নতি হয়।