ফেরিঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘বৈধ চাঁদা’ নেওয়া হবে। ঘাটে গাড়ির সিরিয়াল (সারি) ঠিক রাখতে গাড়িপ্রতি এই চাঁদা হবে ৩০ টাকা।ঈদের আগে দৌলতদিয়া ঘাটে এই হারে চাঁদা আদায় শুরু করা হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশের ১৩টি ফেরিঘাটে এভাবে চাঁদা নেওয়ার নিয়ম কার্যকর করা হবে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান অবশ্য এটাকে চাঁদা না বলে সার্ভিস চার্জ’ বলেছেন। সড়কপথে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও মাওয়া-কাওরাকান্দি ফেরিঘাট। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমের ২২ জেলায় সড়কপথে যেসব যানবাহন যাতায়াত করে, তার সবই এ ঘাট দিয়ে পারাপার হয়। প্রায় তিন হাজার গাড়ি প্রতিদিন এ ঘাট পার হয়।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন , চাঁদাবাজি বন্ধে সার্ভিস চার্জ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবশ্যই রসিদ দিয়ে এ টাকা তোলা হবে। এতে ঘাট থেকে গাড়ি পারাপারের নামে কেউ অবৈধভাবে টাকা তুলতে পারবে না।
ঈদের আগেই এ সার্ভিস চার্জ নেওয়া শুরু হবে। মন্ত্রী বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অনেক গাড়ি সারি করে রেখে অবৈধভাবে টাকা নেওয়া হয়। তাই মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মাধ্যমে দৈনিক ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দিয়ে ঘাট ব্যবস্থাপনা করা হবে
এতে পুলিশ সহযোগিতা করলে তাদেরও এই আয় থেকে পারিতোষিক (ইনসেনটিভ) দেওয়া হবে। নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফেরিঘাটে যানবাহন ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এ বিশৃঙ্খলা দূর করে গাড়ি সুষ্ঠুভাবে পারাপারের জন্য বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের ৭৫ জন লোক নিয়োগ করা হবে।
এই ৭৫ জন তিনটি দলে ভাগ হয়ে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। গাড়ি থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন পরিষদের ব্যানারে রসিদের মাধ্যমে চাঁদা তোলা হবে এবং ওই টাকায় প্রতিদিন শ্রমিকদেও বেতন দেওয়া হবে। এরপরও টাকা অবশিষ্ট থাকলে তা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের তত্ত্বাবধানে থাকবে। মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ফেরিঘাট ও ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হলেও অবৈধ অর্থেও সুবিধোভোগীরা কৃত্রিমভাবে ঘাটে যানজট সৃষ্টি করছে। বর্তমানে গাড়ি সারি করে রাখার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দৌলতদিয়া ঘাটের যানজট নিরসনে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ দৌলতদিয়া ঘাট পরিচালনা করবে। গাড়ি থেকে তোলা চাঁদার হিসাব-নিকাশ স্বচ্ছভাবে করা এবং সংরক্ষণের জন্য একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হবে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি রহিম বক্স বলেন, ঘাটে দালালদের মাধ্যমে পুলিশ চাঁদাবাজি করে।
স্থানীয় চাঁদাবাজেরা টাকার বিনিময়ে বাস ও ট্রাক থেকে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে আগে পারাপারের ব্যবস্থা কওে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের সহযোগিতায় এসব চাঁদাবাজি হয়। এই প্রেক্ষাপটে দৌলতদিয়া ঘাটে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ‘বৈধ চাঁদা’ নেওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি রাজবাড়ি জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর এলাকার বাস-মিনিবাস ও আন্তঃজেলা পরিবহনের যানবাহন থেকেও একইভাবে চাঁদা নেওয়ার নিয়ম চালু করা হবে।
ঢাকায় মালিক সমিতিকে দিতে হবে ৪০ টাকা, শ্রমিক ইউনিয়নকে ২০ ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনকে দিতে হবে ১০ টাকা। অর্থাৎ ঢাকার একেকটি গাড়ি থেকে ৭০ টাকা চাঁদা তোলা হবে।এ চাঁদাবাজি বন্ধ করতেই প্রতি গাড়ি থেকে ২০ টাকা নেওয়া হবে। ৭৫ জন লোক এ বিষয়টি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন এভাবে চাঁদা নিয়ে তো আর ফেরিঘাটে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আনা যাবে না। ফেরির সংখ্যা কম থাকলে সিরিয়াল নিয়ে সমস্যা হবেই। তাই ফেরিঘাটে যাতে অব্যবস্থাপনা না হয়, সে জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর ঘাটে পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়ে যে অভিযোগ আসছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
ঢাকার বাইরে মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নকে ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সড়ক পরিবহন সমিতি গত সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত একটি সুপারিশ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।