গ্রামীণব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ও গ্রামীণব্যাংক অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে ‘ নোবেলজয়ী ড. ইউনূস সুহৃদ-চট্টগ্রাম’।

বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি আগামী ৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার প্রতিবাদ অবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ও বেসরকারি ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর মু. সিকান্দার খান বলেন, “আমরা আশঙ্কা করছি, সরকার ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সুদের হার কমিয়ে দিয়ে চমক সৃষ্টি করবে এবং এ নিয়ে ভোটের খেলা খেলবে। এছাড়া সরকারি ব্যাংকগুলোতে এখন কী হচ্ছে সেটা তো দেশবাসী দেখছেন। আমাদের আশঙ্কা, গ্রামীণব্যাংকও সরকারের নিয়ন্ত্রণে যাবার পর একই অবস্থার সম্মুখীন হবে।”

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মু. সিকান্দার খান বলেন, “ড. ইউনূস যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে গ্রামীণব্যাংক গড়ে তুলেছিলেন, সেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যদি ফরিদপুর, বগুড়া কিংবা গোপালগঞ্জে হতো, ইউনূস যদি সেসব এলাকার বাসিন্দা হতেন, তাহলে সম্ভবত সরকার এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করত না।”

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতির সই করা একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। বক্তব্যটি উপস্থাপন করেন কবি আবুল মোমেন।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সরকার ও বিরোধীদলীয় সাংসদদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগতভাবে সব সাংসদই তাদের সমর্থন দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, “আমরা কিছু অসহায় মানুষকে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হলেও তারা কিছু বলতে পারেন না। তবে তারা সবাই আমাদের বলেছেন, সরকার গ্রামীণব্যাংক নিয়ে অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।”

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গ্রামীণব্যাংক কখনও সরকারি ব্যাংক ছিল না। এর ৯৭ শতাংশ মালিকানা গরিব নারীদের, পরিচালনা বোর্ডের তিন-চতুর্থাংশ সদস্য এ মালিকদের প্রতিনিধি। মালিকানা ও পরিচালনায় বেসরকারি সদস্যদের আইনসঙ্গত এরকম কার্যকর প্রাধান্য থাকা সত্ত্বেও একে সরকারি ব্যাংক বলে চালাবার চেষ্টা দুরভিসন্ধির ইঙ্গিতবহ।

এতে আরও বলা হয়েছে, বাস্তবে গ্রামীণব্যাংককে সরকারিকরণের প্রচেষ্টা শুরু হয় এমডি পদ থেকে ড.ইউনূসকে সরিয়ে দেবার মধ্য দিয়ে। তার জায়গায় পরিচালনা বোর্ড প্রস্ত্মাবিত নতুন এমডি নিয়োগের অনুসন্ধান কমিটি বর্তমান চেয়ারম্যান কর্তৃক তিন-তিনবার প্রত্যাখ্যাত হয়। অথচ বিদ্যমান আইনে চেয়ারম্যানের কোনো ভেটো মতা নেই।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত মালিক সদস্যদের বাগে আনতে ব্যর্থ হয়ে সরকার তাদের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে চেয়ারম্যানকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করছে। এ ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ ব্যাংকটিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করবে এবং অন্যান্য ব্যাংকের মতো এটিকেও লুটপাটের ক্ষেত্রে পরিণত করবে।”
সরকারের এ প্রচেষ্টার প্রতিবাদে ডাকা এ কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষকে অংশ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে মক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম বীরপ্রতীকসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।