বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম মোবাইল টেলিফোন কোম্পানি গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে ৯০০ কোটি টাকা রাজ্স্ব ফাঁকির অভিযোগ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি।

একই সাথে বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে ফ্রিকোয়েন্সি ফিসহ বিভিন্ন খাতে পাওনা হিসেবে ২০০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ চেয়ে গ্রামীণ ফোনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিটিআরসি বলছে, সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অডিট করে রাজস্ব ফাঁকিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওনার এসব বিষয় উঠে এসেছে।

তবে গ্রামীণ ফোনের তরফ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব বা অন্য কোন কর ফাঁকি দেয়নি। গ্রামীণ ফোন লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১৫ বছরের আয়-ব্যয়ের ওপর অডিট বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে রাজস্ব এবং ফ্রিকোয়েন্সি ফিসহ বিভিন্ন খাতে ২০০০ কোটি টাকার বেশি ফাঁকি দেওয়ার কথা উঠে এসেছে। গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক সংখ্যা কম দেখিয়ে ৯০০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব ফাকি দেওয়া হয়েছে।

সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেছেন, গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক সংখ্যা কম দেখিয়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফ্রিকোয়েন্সি ফিসহ বিভিন্ন খাতে ২০০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেনি। সব মিলিয়ে ৩০৩৪ কোটি টাকা পাওনা হিসেবে দেখিয়ে বিটিআরসি গ্রামীণ ফোন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। মি. আহমেদ বলেন, ”গ্রামীণ ফোন অনেক ক্ষেত্রে কাগজপত্র নিজেদের মতো করে সাজিয়েছে বা ম্যানিপুলেট করেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও দেখাতে পারেনি। যা অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে।”

বিটিআরসির এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে গ্রামীণ ফোন। প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাকি ওমর বলেছেন, ”এখন পর্যন্ত আমাদের কোম্পানির সব হিসেব ঠিকঠাক আছে। কোন পাওনা নেই। অডিট চলার সময়ও আমাদের কাছে কোন বিষয়েই প্রশ্ন তোলা হয়নি।” তিনি বলেন, ”গ্রামীণ ফোন কখনও রাজস্ব ফাকি দেয়নি।” গ্রামীণ ফোন কর্তৃপক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের অডিট এবং তারপরে নেওয়া পদক্ষেপ টেলিফোন খাতে এবং বিদেশী বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেছেন, সংশ্লিষ্ট আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এবারই প্রথম টেলিফোন কোম্পানিগুলোর হিসাব পরীক্ষা করে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে প্রথম ধাপে দু’টি কোম্পানির হিসেব নিরীক্ষা করা হচ্ছে । গ্রামীণ ফোনের অডিট শেষ হয়ে গেছে এবং আরেকাটি কোম্পানি বাংলা লিংক-এর অডিট এখনও চলছে। জিয়া আহমেদ আরও জানান, পাওনা অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য গ্রামীণ ফোনকে তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। ঐ সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করা হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।