সম্প্রতি ছাঁটাই হওয়া গ্রামীণফোনের কর্মীদের মধ্যে বিতরণ ও খুচরা বিক্রয় বিভাগের ৪৮ জন কর্মীর এন্ট্রি পাঞ্চের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। আর অবিলম্বে অনৈতিক ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে গ্রামীণফোনের এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে কাল সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত সময় নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আজ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিক্ষোভরত প্রায় ২০০ কর্মচারীকে নিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরায় জিপি হাউস মিলনায়তনে আলোচনায় বসে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। এই বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা পাঁচ দফা দাবিতে আজ সকাল থেকেই আন্দোলন করেন। সকাল সাড়ে আটটা থেকে অ্যাসোসিয়েশনের নেতা-কর্মী ও সম্প্রতি ছাঁটাইকৃত কর্মীরা গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন।
বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে সকাল সাড়ে আটটার পরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ জিপি হাউসে প্রবেশ করতে পারেননি। 
অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি শফিকুর রহমান জানান, পাঁচ দফার অন্য দাবিগুলো হলো যৌক্তিক হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করা, ছাঁটাইকৃত কর্মীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, কোম্পানির সব বেআইনি কার্যক্রমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার এবং ৫ শতাংশ মুনাফা-লভ্যাংশসহ বকেয়া পাওনা প্রদান করা।
বিতরণ ও খুচরা বিক্রয় বিভাগের সেলস এক্সিকিউটিভ এস এম সাইদুজ্জামান বলেন, তাঁর বিভাগে ৪৮ জন কর্মীকে মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। আজ সকাল থেকে তাঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। তিনি জানান, লিখিতভাবে চাকরিচ্যুতির কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি এবং এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো আলোচনাও করেনি। 
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রায় ৩৫৫ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে গ্রামীণফোনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা মনিরুল কবির সাংবাদিকদের জানান, গ্রামীণফোন গত এক বছরে দেড় শ জনকে ছাঁটাই করেছে। টেলিযোগাযোগ খাত সব সময় পরিবর্তনশীল। এ জন্য কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণে যাঁরা উত্তীর্ণ হতে পারেন না, তাঁদের চলে যেতে হয়। পাশাপাশি শূন্য স্থানে নতুন প্রযুক্তির জন্য উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়োগও দেওয়া হয়। তিনি জানান, গ্রামীণফোনে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া সব সময় আইন অনুযায়ী করা হয়।
বিতরণ ও খুচরা বিক্রয় বিভাগের ৪৮ জন কর্মীকে মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে গ্রামীণফোনের এই কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এসব কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেওয়া হয়। কারণ তাঁরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। নোটিশের পর থেকে তাঁরা ছুটিতে ছিলেন জানিয়ে মনিরুল আরও বলেন, ‘আজ সকালে তাঁরা অফিসে প্রবেশ করতে না পেরে অন্য কর্মীদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেন।’ এ সময় ছাঁটাইকৃত কর্মীদের সঙ্গে কিছু বহিরাগত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ, কখনোই উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ছাঁটাই করা হয় না। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন, নিম্নপদস্থ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ সবাইকে ‘রিফর্ম প্রসেস’ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গত কয়েক বছরে উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তাকেও এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। 
গ্রামীণফোনের কোনো এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন আছে কি না, জানতে চাইলে মনিরুল কবির বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত একটি ই-মেইল আজ সকালে আমরা পেয়েছি। মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনরের আইন অনুযায়ী এ ধরনের অ্যাসোসিয়েশন করার বিধান রয়েছে, তবে সেটা অবশ্যই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে করতে হবে।’
এদিকে সকালে যাঁরা অফিসে প্রবেশ করতে পারনেনি, তাঁদের বাসায় থেকে অনলাইনে কাজ করতে নির্দেশ দেয় গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ।