সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে দুদকের আমন্ত্রণে নৈশভোজ শেষে রাজধানীর হোটেল রুপসী বাংলায় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি (কান্ট্রি ডিরেক্টর) অ্যালেন গোল্ডস্টেইন একাধিক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি অনুসন্ধান পর্যবেক্ষণ করতে আসা বিশ্বব্যাংকের গঠিত বিশেষজ্ঞ দল কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে তাদের প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংকে জমা দেবে।
অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেন, আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বৈঠক হবে বলে তিনি জানান।
গত দু`দিন তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। তাদের পক্ষ থেকে আবাসিক প্রতিনিধি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন।
সোমবার ব্যস্ততম দিন কেটেছে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তারা কাটিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসে। দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন।
পাশাপাশি তিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইকম, ওরিয়েন্টাল ও হলকোর চার কর্মকর্তার সঙ্গেও প্যানেলটি বৈঠক করেছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানান, সারাদিন নিজেদের মধ্যে বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল একটি কর্মপদ্ধতি তৈরি করেছে। এর ভিত্তিতেই পরবর্তীতে তারা দুর্নীতির তদন্ত পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সূত্রটি কিছু জানাতে পারেনি।
টানা দু`দিন বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বৈঠক হলেও কোনো তথ্যই দেয়নি বিশ্বব্যাংক। পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রমের সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গেলেও বিশ্বব্যাংক তাদের তরফে কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়নি দুদককে। সোমবার রাতে নৈশভোজের আগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দু`পক্ষের একঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়।
সোমবার দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পদ্মা দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, সেতুতে যে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তা নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান এখনও মামলা করার পর্যায়ে পৌঁছেনি।
গোলাম রহমান আরও বলেন, আমরা ওদের নিশ্চিত করেছি যে, বাংলাদেশের আইন ও বিধান অনুসরণ করে আমরা একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান করব।
শনিবার মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যরা ঢাকায় আসেন। বিশেষজ্ঞ দলের অন্য দুই সদস্য হলেন- হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং ও যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের সাবেক পরিচালক রিচার্ড ওল্ডারম্যান। এ প্যানেলের সঙ্গে রোববার দুদকের প্রধান বৈঠক হয়।
পদ্মাসেতুর প্রাক পরামর্শক যাচাইতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক চলতি বছরের ২৯ জুন পদ্মাসেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি বাতিল করে।
সরকারের তরফে টানা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর পর আবারও ঋণ দিতে সম্মত হলেও দুর্নীতির তদন্ত অধিকতর জোরদার করার দাবিটি আগের মতোই রেখেছে বিশ্বব্যাংক। তাই বিশ্বব্যাংকের দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় দুদক।
৫ অক্টোবর পদ্মাসেতুর দুর্নীতির তদন্ত পর্যবেক্ষণে এ প্যানেল গঠনের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। প্যানেলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন।