জনসংখ্যা নীতিমালা চূড়ান্ত করছে সরকার। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় এই নীতিমালা উঠবে। ‘বিশ্বজনসংখ্যা দিবস’ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবর রহমান ফকির। আজ বুধবার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে সরকার। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সার্বজনীন প্রজণন স্বাস্থ্যের জন্য পরিবার।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং পরিবার কল্যাণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ঝিমিয়ে পড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গতি এসেছে। এই খাতে সরকারের মনোযোগ আগের থেকে অনেক বেশি। লোকবল নিয়োগ, ক্যাডার, নন-ক্যাডার দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগ, জন্মনিয়ন্ত্রণে পিছিয়েপড়া এলাকায় বিশেষ উদ্যোগের কারণে অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, দেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগই হচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। অথচ এখন দেশে গড় বিয়ের বয়স হচ্ছে ১৬ বছর চার মাস এবং এক-তৃতীয়াংশ মহিলা ২০ বছর বয়স হওয়ার আগেই মা হয়ে যায়। আর ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছে মাত্র শতকরা ৩৮ ভাগ।

এছাড়া দেশে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা গ্রহণকারীর হার এখনো অনেক কম। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৯ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৯৩ জন মানুষ বাস করছে। যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যেই জনসংখ্যা বর্তমানের দ্বিগুণ হবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার এগোচ্ছে।

বর্তমানে এ হার শতকরা ৬১ দশমিক ৭। আগামী ১০ বছরের মধ্যে আরো ১৮ ভাগ অর্জন করা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিটি ঘরে গিয়ে মাঠকর্মীদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মা যেন পরিবার পরিকল্পনার সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩ হাজার ভাগের এক ভাগ। অথচ জনসংখ্যার দিক থেকে ৪৭ ভাগের এক ভাগ। বিশাল জনসংখ্যার এদেশে এখনই মৌলিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে দেশের সব উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জনসংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি : দেশের পঞ্চম আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। মোট জনসংখ্যার ৭ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার পুরুষ এবং ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার নারী। ১০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৪ হাজার।

আদমশুমারির রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে পুরুষ ও নারীর সংখ্যায় সাম্য। নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা ২ লাখ বেশি। এর আগে ২০০১ সালে ১০০ জন পুরুষে ১০৬ জন নারী ছিল। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা ১০ বছর আগের চেয়ে শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ কম।

জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৬৪ জন। এ রিপোর্ট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা কত? কারণ, জাতিসংঘের ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০১০’-এ বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার। আবার গত বছরের জুলাই মাসে আমেরিকার সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৮৮৩ জন। ২০০১ সালের আদমশুমারিতে দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার। ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৩৪ জন।