পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার হতে দফায় দফায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত সরকার প্রেসিডেন্ট থেইন সেন জাতিসংঘের প্রতি দেওয়া বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করা হবে।

এমন বক্তব্যে শুক্রবার উখিয়া-টেকনাফ শরনার্থী শিবিরে অবস্থানকারী রেজিষ্ট্রার্ড,আন-রেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অনেকে শত বছরের পূর্ব পুরুষের ভিটে বাড়ী ছাড়া এসব রোহিঙ্গারা হতাশা ব্যক্ত করেন ও দুচিন্তায় পড়ে যান।

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট দফতরের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত খবরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক দূত অ্যন্টিনিও গুটেরেস এর প্রতি বলেন, আমরা আমাদের লোকদের প্রতি দায়িত্ব নেবো। কিন্ত নৃতাত্ত্বিকভাবে আমাদের নয়, সেই অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের গ্রহন করা অসম্ভব। এতে স্পষ্ট হয়ে গেল বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবে না মিয়ানামারের সরকার।

মিয়ানমার প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যে  জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক দূত অ্যান্টনিও গুটেরেস প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা’র কাজ নয়। বরং জাতিসংঘ চায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক।

১৯৮০ দশকে এদেশের রোহিঙ্গাদের আগমন ঘটে। নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু, উখিয়া-টেকনাফ সীমান- অতিক্রম করে এসময় প্রায় ২লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে তারা আশ্রয় গ্রহন করে। পরবর্তীতে দু’দেশের সফল কুটনীতিক তৎপরাতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অতি অল্প সময়ে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হলেও বাদ বাকী রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন বন জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে।

দ্বিতীয় দফায় ১৯৯১ সালে সীমান্তের  নাফ নদী অতিক্রম করে প্রায় ২লক্ষ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন শরাণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠক করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে।

১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ২ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ পাঠানো হলেও টেকনাফের নয়া পাড়া শরণার্থী শিবিরে ১ হাজার ৭৭৫ পরিবারের ১৪ হাজার ৪৩১জন রোহিঙ্গা এবং উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ১ হাজার ১৯৪ পরিবারে ৯ হাজার ৮৫০ জন সহ প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা দুই ক্যাম্পে অবস্থান করে।

বাংলাদেশে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি বারবার তাগিদ দিয়ে আসছিল। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপও ছিল মিয়ানমারের ওপর ।