বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও বন সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রচলিত আইন আরো অধিক যুগোপযোগী ও কার্যকর করার বিধান করে আজ সংসদে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) বিল-২০১২ সংশোধিত আকারে পাস হয়েছে। পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন।
বিলে জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও বন সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব যথাক্রমে প্রধান ওয়ার্ডেন, অতিরিক্ত প্রধান ওয়ার্ডেন ও ওয়ার্ডেনের ওপর ন্যাস্ত করার বিধান করা হয়েছে। বিলে প্রধান বনসংরক্ষক, বন সংরক্ষক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তাগণ পদাধিকার বলে এই তিনটি দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার বিধান করা হয়েছে।
বিলে গেজেট বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কোন প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বরেণ্য ও প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বিশারদগণের সমন্বয়ে অনধিক ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি বৈজ্ঞানিক কমিটি গঠন করে এর কার্যপরিধি নির্ধারণ করার বিধান করা হয়েছে। এছাড়াও একইভাবে সরকার একজন চেয়ারম্যান ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠন করতে পারবে।
বিলের বিধান লংঘনজনিত অপরাধে সুনির্দিষ্ট দণ্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী নিবন্ধিত এবং প্রদত্ত নিবন্ধন চিহ্ন নকল, বিনিময় অথবা অন্য কোনভাবে হস্তক্ষেপ বা পরিবর্তন করেন অথবা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে বন্যপ্রাণী এর কোন অংশ, মাংস, ট্রফি অথবা এ থেকে উৎপন্ন দ্রব্য ক্রয় করেন, তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ একবছর কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান করা হয়েছে।
এছাড়া অভয়ারণ্যের বাধা-নিষেধ লংঘনজনিত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান এবং এই অপরাধের পুনরাবৃত্তিতে ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান করা হয়েছে।
বিলে বাঘ ও হাতি হত্যাজনিত অপরাধে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাঘ বা হাতি কর্তৃক কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তার জীবন রক্ষার্থে বা আক্রমণকারী বাঘ ও হাতির ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া বিলে চিতাবাঘ, লামচিতা, উল্লুক, সাম্বার হরিণ, কুমির, ঘড়িয়াল, তিমি বা ডলফিন, পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যাজনিত অপরাধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দণ্ডের বা দণ্ড প্রদানের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি বিলে অপরাধ সংঘটনে সহায়তা প্ররোচণা, মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের বা বেআইনীভাবে জব্দকরণ ইত্যাদি বিষয়েও সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়েছে।