ভূমিকম্প হলো ভূপৃষ্ঠে সংঘটিত আকস্মিক ও অস্থায়ী কম্পন। ভূ-অভ্যন্তরের শিলারাশিতে সঞ্চিত শক্তির আকস্মিক অবমুক্তির কারণে সৃষ্ট এই স্পন্দনের মাত্রা মৃদু কম্পন থেকে প্রচণ্ড ঘূর্ণনের মতো হতে পারে। এটি তরঙ্গগতির একধরনের শক্তি, যা সীমিত পরিসরে উদ্ভূত হয়ে ঘটনার উৎস থেকে সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত ভূমিকম্প স্থায়ী হয়। স্থলভাগের যে বিন্দুতে ভূমিকম্পের তরঙ্গ সূচিত হয়, তাকে কেন্দ্র বলে। এই কেন্দ্র থেকে স্পন্দন সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম এটি কেন্দ্রের ঠিক ওপরের বিন্দু বরাবর ভূপৃষ্ঠে অনুভূত হয় যাকে উপকেন্দ্র বলে। এই উপকেন্দ্রেই ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকি অনুভূত হয়। কেন্দ্রের গভীরতার ভিত্তিতে ভূমিকম্পকে অগভীর কেন্দ্র (০-৭০ কিলোমিটার), মাঝারি কেন্দ্র (৭০-৩০০ কিলোমিটার) ও গভীর কেন্দ্র (৩০০ কিলোমিটার) ইত্যাদি সংজ্ঞায় অভিহিত করা হয়।
বিভিন্ন কারণে ভূমিকম্প হয়। তবে প্রধানত এর কারণ দুটি। যেমন: ভূগাঠনিক ও অভূগাঠনিক।
বিশ্বে প্রায় সব ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প দুটি সুপরিচিত অঞ্চল বা বলয়ে উদ্ভূত হতে দেখা যায়। যেমন: দি সারকাম-প্যাসিফিক বেল্ট বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয় ও ভূমধ্যসাগরীয় হিমালয় ভূকম্পনীয় বলয়।
বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হলেও এই কম্পনের প্রকৃতি ও মাত্রা সম্পর্কে ধ্যানধারণা খুবই অপ্রতুল। এ দেশে ভূমিকম্প অনুধাবনের প্রয়োজনীয় সুবিধা পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের ভেতরে ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে বিগত ২৫০ বছরের ভূকম্পনের ইতিহাস পাওয়া যায়। ভূমিকম্পের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক মাঝারি থেকে বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৫টিরও বেশি আঘাত হেনেছে ১৯৬০ সালের পর। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে বিগত ৩০ বছরে ভূমিকম্পের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ উচ্চ ভূকম্পনশীল অঞ্চলগুলো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরের হিমালয়ান আর্ক ও শিলং মালভূমি, পূর্বে বার্মিজ আর্ক ও আরাকান ইয়োমা ঊর্ধ্বভঙ্গধারা এবং উত্তর-পূর্বে জটিল নাগা ডিসাং হাফলং ঘাত অঞ্চল। ভূগাঠনিক দিক থেকে দুর্বল এসব অঞ্চল অববাহিকা এলাকার মধ্যে শিলা চলাচলের প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান করে বলে ধারণা করা হয়।

 সূত্র: বাংলাপিডিয়া।