ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে জাল টাকার ছড়াছড়ি ও অজ্ঞান পার্টি’র দৌরাত্ম আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। প্রতারকদের হাতে পড়ে সাধারণ লোকজন সর্বশান্ত হচ্ছে। শুধু রাজধানীতেই গত এক সপ্তাহে অজ্ঞান পার্টি’র খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হওয়ার অন্তত দুই ডজন ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। জাল টাকার ব্যবসা ও অজ্ঞান পার্টি’র সিন্ডিকেটে মহিলা সদস্যও রয়েছে। গত এক সপ্তাহের গণমাধ্যম বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা যায়।

অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ায় অবশেষে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামতে বাধ্য হয়েছে। সর্বশষ শনিবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে  সায়েদাবাদ থেকে অজ্ঞান পার্টির ছয় সদস্যকে আটক করা হয়েছে। আকটকৃতরা সবাই পুরুষ হলেও এদের গ্রুপে মহিলা সদস্যও রয়েছে বলে জানা যায়।

অজ্ঞান পার্টির সিন্ডিকেট কাউকে টার্গেট করলেও বেশির ভাগ সময় মহিলা সদস্যদের দিয়ে ফাঁদ পাতছে বলেও গণমাধ্যমে এসেছে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার লুৎফল কবীর বলেন, “অজ্ঞান পার্টির মূল টার্গেট হলো সহজ সরল মানুষজন। এরা ব্যস্ত স্থানগুলোতে ওৎ পেতে থেকে লোকদের অজ্ঞান করে সব কিছু নিয়ে নেয়। পুলিশ এদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে।”

ঈদে ঘরমুখো মানুষকে টার্গেট করে এরা অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। 

গোয়েন্দা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুধু রাজধানীতেই অজ্ঞান পার্টির শতাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। মাত্র ছয় জনকে আটক করলেও এখনো পুরো সিন্ডিকেটই পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

অপরদিকে ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। রাজধানীর সর্বত্র এরা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় সব মূল্যমানের নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে। এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে জাল টাকার ব্যবসায়ীরা। উন্নত প্রিন্টিং মেশিনে তারাও প্রায় হুবহু জাল টাকা তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু কিছু জাল টাকার সিন্ডিকেট প্রেস’এ জাল নোট বানাচ্ছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ জাল নোট তৈরি হচ্ছে বাসা-বাড়িতে শক্তিশালী কম্পিউটার, উন্নত অফসেট কাগজ ও প্রিন্টার মেশিন দিয়ে।

গত দুই সপ্তাহে গণমাধ্যমে জাল টাকার ছড়াছড়ি সংক্রান্ত শতাধিক সংবাদ এসেছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। শনিবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর পোস্তগোলা থেকে নগদ ৫০ লাখ টাকার জাল নোটসহ সাত জনকে আটক করেছে। আটক সাত জনের মধ্যে দু’জন নারী সদস্যও ছিল।

পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি রোববার পরিষ্কার করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তাছাড়া জাল টাকা ও অজ্ঞান পার্টি’র সিন্ডিকেটকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানা যায়।

এদিকে সারাদেশে জাল টাকার ছড়াছড়ি ও অজ্ঞান পার্টি’র অপতৎপরতা বৃদ্ধিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে একাধিক বিবৃতি দিয়েছে। তারা এ ধরনের ঘটনাকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি বলেও উল্লেখ করেছে।

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বরাবরের মতোই জোর গলায় বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো রয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের জীবন ও মালের নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো মাঠে থেকে সতর্ককতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণকে সতর্কতা অবলম্বন করে লেনদেন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। একই  সঙ্গে কাউকে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। রাস্তায় কারো দেয়া কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্যও পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঈদকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হবে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। তাছাড়া গোয়েন্দা নজরদারি ও র‌্যাব টহল ইতিমধ্যে বাড়ানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে একই সূত্র।