বাংলাদেশ পুলিশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কাজে পুলিশ নয় বরং ‘অন্য কিছু বাহিনীর কাজের ধরন’ প্রতিফলিত হচ্ছে উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় একে সংস্কারের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের আধুনিক পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়তে হবে। র‌্যাব বিলুপ্ত নয় বরং একে সংস্কার করতে হবে।

তিনি বলেন, খোদ পুলিশকে আরো দক্ষ ও মানবাধিকার বান্ধব করে গড়ে তুলতে সরকারকে একটি বিস্তারিত প্রস্তাব দেয়ার জন্য কমিশনের একটি পর্ষদ কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, বিডিআর বিদ্রোহ ও বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন ও পরে বক্তব্যে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন করা এবং নির্যাতন করা এখন র‌্যাবের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি ও নিয়মে পরিণত হয়েছে’ বলে উল্লেখ করে। এ কারণে র‌্যাব বিলুপ্ত করে পুলিশের ভেতরে বা বাইরে  নতুন একটি ‘বেসামরিক’ বাহিনী গড়ার সুপরিশ করে তারা।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিলুপ্ত করা নয়, বরং র‌্যাবের সংস্কার এখনো সম্ভব। এ সংস্কারের জন্য প্রশিক্ষণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক মনোভঙ্গীর বদল জরুরি বলে তিনি জোর দিয়ে বলেন। তিনি বলেন, ‘‘সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও প্রতিষ্ঠান একের চেয়ে আরেকটা আলাদা। সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় প্রতিপক্ষকে হত্যা করার জন্য, আর পুলিশের প্রশিক্ষণ হয় অপরাধ ও অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের র‌্যাবকে সংস্কারের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। র‌্যাবকে শুধু নামকাওয়াস্তে পুলিশ বাহিনী হলে হবে না, যেভাবে আমরা এখানে শুধু পুলিশ থেকে আনা মহাপরিদর্শককে রেখে দিয়েছি শুধু দেখানোর জন্য যে এটা পুলিশের অধীনে, আসলে বাস্তবে কিন্তু সেটা প্রতিফলিত হচ্ছে না। কর্মকাণ্ডে গিয়ে দেখছি পুলিশের কাজের প্রতিফলন, পুলিশের ধরন র‌্যাবে আসছে না। অন্য কিছু বাহিনীর ধরনের সাথে মিলছে।’’

ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘সামরিক বাহিনীর কাজ ভিন্ন, তাদের যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত করা হয়। আর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বিধান ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা; এটা হচ্ছে ভিন্নতর কাজ। এই ভিন্নতর কাজ করবার জন্যই কিন্তু আমাদের পুলিশ বাহিনীর জন্ম। এক্ষেত্রে যদি আধুনিক জীবনের সমান্তরালে আইন শৃঙ্খলার নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের জন্ম হয়, তবে তা রুখতে আরো একটি আধুনিক পুলিশ বাহিনী থাকতেই পারে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটি আছে। কিন্তু সেটি হতে হবে সামরিক বাহিনীর বাইরে। সেটি যেন সামরিক বাহিনীর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত না হয়।’’
নিত্য নতুন ধরনের অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে র‌্যাব সফল বলে সরকার মনে করে; এটা উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘পুলিশ বাহিনীর সংস্কার করে একে আরো মানবাধিকার বান্ধব বাহিনীতে রুপান্তরিত করতে আমাদের আগ্রহ আছে। আগ্রহের কথা আমরা সরকারকে জানিয়েছি। আমাদের কমিশন সদস্যদের একটি পর্ষদ সংস্কার প্রস্তাব তৈরিতে কাজ করছে।’’

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই “ভয় আমাকে ছাড়ে না’: ২০০৯’র বিডিআর বিদ্রোহের পর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন ও পক্ষপাতদুষ্ট বিচার’’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ঢাকায় প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশের শীর্ষ দুই মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এবং ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’। বিশেষ ‘সামরিক ট্রাইব্যুনাল’-এ এই বিদ্রোহ ও হত্যার বিচারকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট গণবিচার’ হিসেবে দেখিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘র‌্যাব এই নির্যাতনগুলোর অনেকগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।’’ অবিলম্বে এই বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত ও পক্ষপাতমুক্ত বিচার করার দাবি করেছে সংস্থাটি।