সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইন, ২০১২’র খসড়া’য় পথচারী ও বাইসাইকেলের জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড এ খসড়াটি তৈরি করেছে। খসড়ায় বাইসাইকেল নিবন্ধন ও চালানোর জন্য সরকারি সনদ (লাইসেন্স) নেয়ার যে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে, তার বিরোধিতা করেছেন তারা।
মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট আয়োজিত এক মত বিনিময় সভায় বলা হয়, বিশ্বের কোনো দেশে বাইসাইকেল চালাতে লাইসেন্স নিতে হয় না। নেদারল্যান্ডের মত উন্নত রাষ্ট্রে পরিবহনব্যবস্থার ২৭ ভাগ জুড়েই আছে সাইকেল, আর নগর জীবনে তা ৫৯ ভাগ। অন্যদিকে আমাদের দেশে বাইসাইকেল ও পায়ে হাঁটাকে উৎসাহিত করতে পারছি না আমরা।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের ধানমন্ডিস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন।
এতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দালন (বাপা) এর নির্বাহী সদস্য এবং বাপা যাতায়াত উপ-কমিটির সদস্য সচিব মহিদুল হক খান।
সভায় আইনের বিভিন্ন ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব তুলে ধরেন ট্রাস্টের ন্যাশনাল এডভোকেসি কর্মকর্তা অফিসার মারুফ রহমান। এছাড়া অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর কর্মসূচি কর্মকর্তা সাবিনা নাঈম।
সভায় জানানো হয়, রাজধানীতে প্রায় ৮০ ভাগ যাতায়াতই কম দূরত্বে মধ্যে। যার বেশির ভাগই দুই কিলোমিটার বা তারও কম দূরত্ব। এই অল্প দূরত্ব যাতায়াতের জন্য বাইসাইকেল বা পায়ে হাঁটাই যথেষ্ট। অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে রাজধানীতে বাইসাইকেল ও পথচারীর সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব।
প্রস্তাবিত খসড়া সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইন-২০১২ চুড়ান্ত করার আগে প্রতিটি জেলায় সরাসরি জনমত গ্রহণের সুপারিশ করে সংগঠনটি। এছাড়া আইনটি বেশ কয়েকটি ধারা ও উপধারার সংশোধনেরও সুপারিশ করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, হাঁটা ও বাই-সাইকেলে চলাচল কার্বন নির্গমন-জ্বালানি নির্ভরতা-যাতায়াত খরচ কমানো ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, কাজেই মানুষকে উৎসাহ দিতে বাই-সাইকেলকে ওই ধারায় প্রস্তাবিত বিধান এর আওতামুক্ত রাখা দরকার। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে পথচারী এবং বাইসাইকেলের ওপর অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে যান্ত্রিক যানবাহনের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে।
সভায় বলা হয়, রাস্তায় পথচারী ক্রসিং এর জায়গা না থাকলে পথচারীদের যানবাহনকে রাস্তা ছেড়ে দেয়াসহ অনেকগুলি ধারা মানুষের হাঁটার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা তৈরি করবে। কারণ নগরের রাস্তা কিংবা মহাসড়কে পথচারী ক্রসিং নাই বললেই চলে, এ আইন প্রণীত হলে যানবাহনের চালকরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে এবং দুর্ঘটনা বাড়বে। এমনিতেই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনা এবং দুর্ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাবিত আইনকে সংশোধন করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, আইনের অনুসারে বাইসাইকেলের নিবন্ধন এবং বাইসাইকেল চালকের লাইসেন্স বিধান পরিবর্তন করতে হবে। বাইসাইকেলের জন্য নিবন্ধন ও চালকের সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা বাই-সাইকেলের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে।