অনেকের মন খারাপের ভূত তাড়িয়েছে তাঁর লেখা, নাটক আর চলচ্চিত্র। সহজ করে জীবন দেখা এবং দেখানোর এই কারিগরের সকলকে সুখী করার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে তাঁর নামেই বাঁধভাঙ্গা কান্না! প্রিয় সন্তান হারিয়ে শোকার্ত দেশ। দেশের প্রতিটি মানুষই যেন স্বজন হারানোর বেদনায়। গোটা জাতি অশ্রুসজল। শহীদ মিনারে নেমেছে শোকার্ত মানুষের ঢল। জাতীয় চেতনার এই বেদীতে এখন শোকের আবহ।
সোমবার ৮টা ৫৫ মিনিটে কফিনবন্দী হয়ে দেশের মাটিতে ফেরেন হুমায়ূন আহমেদ। সেখান থেকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ মিনারে। শহীদ মিনার যেনো আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। সেখানে সকাল থেকেই হাজারো মানুষ। কান্নাভেজা চোখ, মলিন মুখ। শোকের ভাষাই য়েনো ফুটে উঠেছে।
হুমায়ূন আহমেদ যেমন কথামালায় সাজাতেন তার গল্প, উপন্যাস। তেমনই যেনো গোছানো এক শ্রদ্ধাঞ্জলির আয়োজন। তরুনদের ভিরটাই যেনো একটু বেশি। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। জনতার লাইন ছড়িয়ে পড়েছে শহীদ মিনার এলাকা থেকে অনেক দুর পর্যন্ত। চোখে মুখে আচরণে যে পরিপূর্ণ আবেগ ও প্রিয় মানুষের জন্য ভালোবাসা।
শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব শুরু হয় রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মাহবুবু হক শাকিল ও সাইফুজজামান শেখর ও আওয়ামী লীগের পক্ষে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান, দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবীর খোকন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
পরে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সেখানে মানুষের হাতে হাতে ফুল। সবাই যেনো ফুলে ফুলে ছেয়ে দিতে চান প্রিয় লেখকের কফিন।
শহীদ মিনারে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহের পাশে রয়েছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমদের ছেলে নুহাশ, মেয়ে শীলা ও নোভা, স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ভাই ড. জাফর ইকবাল, আহসান হাবীবসহ ঘনিষ্টজনেরা। ক্ষণে ক্ষণে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন নুহাশ, শিলারা।
বেলা ১১টার দিকে আসেন হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ। কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে তার কঠোর মলিন মুখের অভিব্যক্তি যেনো বলে দিচ্ছিলো মনের গভীরে কত কষ্ট পোষণ করছেন এই মা। সন্তানের কাছে দাঁড়িয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে না পারার ভীষণ কষ্ট তোর চোখে মুখে।
বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে কফিনের পাশে আসেন মেহের আফরোজ শাওন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যান হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজের দিকে। সেখানে শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় পাশেই দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন শিলা, নুহাশরা।
এদিকে, সাধারণ মানুষের শোক শ্রদ্ধায় ফুলে ভরে উঠছে হুমায়ূন আহমেদের কফিন।