মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি যুবক কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, রেজওয়ানুলের বাংলাদেশি পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে ‘কনস্যুলার অ্যাকসেস’ চাওয়া হয়। আইন অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে কনস্যুলার অ্যাকসেস মঞ্জুর করা হয়।নিউইয়র্কের কারাগারে আটক রেজওয়ানুল বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ দূতাবাসকে জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রেজওয়ানুলের ব্যাপারে নিবিড় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাঁর বাইরে চলাফেরা ছাড়াও ইন্টারনেট বা ফোনে যোগাযোগের সূত্র ধরে গোয়েন্দা তদন্ত চলছে। বাংলাদেশ থেকে আসা গোয়েন্দা তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস।

বাংলাদেশে রেজওয়ানুলের কোনো জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাঁকে সহযোগিতাকরা হবে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে রেজওয়ানুলের সর্বশেষ অবস্থা জানতে ওয়াশিংটন দূতাবাস থেকে একজন পদস্থ কর্মকর্তা নিউইয়র্ক সফর করছেন।

নাফিসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি বাংলাদেশি মঈন চৌধুরী ‘প্রথম আলো’কে জানান, প্রচলিত আইনে রেজওয়ানুলকে প্রথমে ‘প্রি-ট্রায়াল’-এর মুখোমুখি করা হবে। এ পর্যায়ে নাফিসকে অপরাধ স্বীকার করে হ্রাসকৃত দণ্ড গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হবে। রেজওয়ানুল নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেবিচারটি ‘বেঞ্চ ট্রায়াল’ বা পূর্ণ জুরি ট্রায়ালে ফয়সালা হবে। জুরি ট্রায়াল দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া বলে জানান মঈনচৌধুরী।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সন্ত্রাসবাদীহামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত বুধবার বাংলাদেশি যুবক রেজওয়ানুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অভিযোগপত্র গ্র্যান্ড জুরিতে পাঠানো হয়েছে। মার্কিন আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যেরেজওয়ানুলের মামলা গ্র্যান্ড জুরির সামনে উঠবে। জুরির অভিমত সাপেক্ষে অভিশংসকেরা এরপর আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করবেন। রেজওয়ানুল তখন নিজেকে নির্দোষ ঘোষণা বা দোষ স্বীকারের সুযোগ পাবেন।

রেজওয়ানুলের একমাত্র ভরসা এখন গ্র্যান্ড জুরি।গ্র্যান্ড জুরিরা যদি রেজওয়ানুলকে নির্দোষ বলে রায় দেন, তবেই তিনি মুক্তি পাবেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপকবিধ্বংসীঅস্ত্রের ব্যবহার ও জঙ্গিসংগঠন আল-কায়েদাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনাহয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তিযাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

সাধারণত, বড় ধরনের বা চাঞ্চল্যকর মামলা পাঠানো হয় গ্র্যান্ড জুরিতে। গ্র্যান্ড জুরিরা তদন্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য শুনে ও প্রমাণ দেখে জানাবেন মামলা চলবে কি না। ১৬ থেকে ২৩ জন থাকেন গ্র্যান্ড জুরিতে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১২ জনের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। রেজওয়ানুলকে ধরা হয় ‘স্টিং অপারেশন’-এর মাধ্যমে। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই এই অপারেশন পরিচালনা করে।

মূলত, ফাঁদপেতে অপরাধ করতে সহযোগিতাও উত্সাহ জুগিয়ে অপকর্ম সংঘটনের ঠিক আগমুহূর্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধরার নাম ‘স্টিং অপারেশন’।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটিপরিচালিত হলেও সুইডেন ও নেদারল্যান্ডে তা নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে এটি বেশি ব্যবহূত হচ্ছে। নিউইয়র্কে ২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আল-কায়েদার হামলার পর থেকে এফবিআই এটি বেশি ব্যবহার করছে।

মার্কিন গোয়েন্দাদের এ ধরনের পাতা ফাঁদে ফেলে গত১০ বছরে ২০৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচারের মুখোমুখি হওয়া ৮১ জনের মধ্যে সবার দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর এ পর্যন্ত আরও তিনজন বাংলাদেশি প্রায় একই ধরনের সন্ত্রাসী পরিকল্পনার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তারহয়েছেন। বিচারে তাঁদের সবাইকেই কারাদণ্ড ভোগ করতে হচ্ছে।

২০০৪ সালে মোহাম্মদ হোসেন নামের একজন বাংলাদেশি ইমামকে একই ধরনের নাশকতামূলক পরিকল্পনায় গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে অপরাধ স্বীকার করে মোহাম্মদ হোসেন ১৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসীপরিকল্পনার অভিযোগে ২০০৯ সালে এহসানুল সাদেকী নামের এক বাংলাদেশি যুবককে ১৭ বছরের কারাদণ্ডদেওয়া হয়েছে। ম্যাসাচুসেটসে বড় হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রেজওয়ান ফেরদৌস নামের আরএক বাংলাদেশি যুবককে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন আটলান্টার কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।