বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। রাজধানীর পল্টন মোড়ে রিকশা থেকে নাম ছিলেন মধ্য বয়সী ব্যবসায়ী আফসার উদ্দিন। তিনি রিকশা নেমে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে রিকশা ভাড়া দেন। এরপর সেখানে সিগারেট নিয়ে টাকা দিতে যেয়েই দেখা দেয় বিপত্তি। দেখেন মানি ব্যাগ নেই। ঠিক পাশ ঘেঁষা ২৫-২৮ বছর বয়সী বোরকা পরিহিত এক নারী ছাড়া আর কেউই নেই।
আফসার উদ্দিনের প্রথম দিকে তেমন সন্দেহ না হলে এক পর্যায়ের সন্দেহের তীর ওই নারীর দিকেই যায়। তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তার সন্দেহটা প্রবল হয়ে উঠে। তিনি আর বেশি দেরি না করে পল্টন মোড়ের সচিবালয় ঘেষা পুলিশ বক্সে যান। ডেকে নিয়ে আসেন পুলিশও। পুলিশ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে আসতে না চাইলেও পরে ওই নারীকে বক্সে নিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে তিনি আফসার উদ্দিনের মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেন। নারীটির কাকুতি মিনতিতে পুলিশের মন গলে যায়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাজধানীতে ঈদের বাজারে ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ নানা চক্রের সঙ্গে নারী পকেটমারের একটি গ্রুপ সক্রিয়ভাবে নেমে পড়েছে। বোরকা পরা ছদ্মবেশী এই নারীরা বড় বড় মার্কেটের সামনে বাসস্টান্ডে অথবা জনাকীর্ণ স্থানে দাঁড়িয়ে থাকছে। যখন কেউ কোন ভিড়ের কারণে গাদাগাদি করে যাওয়ার চেষ্টা করছে তখন-ই এরা কাজের কাজটি করে ফেলছে। আর এদের প্রধান টার্গেট-ই হচ্ছে মানিব্যাগ।
সূত্রে জানা যায়, এই সকল মহিলারা পকেট মারার জন্য জনাকীর্ণ স্থান আর সন্ধ্যার পর মার্কেটগুলো বেছে নেয়। অনেক সময় রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটের লোকাল বাসগুলোতে উঠে। মার্কেটের ভেতর অথবা বাইরে গেটের সাথে দাঁড়িয়ে থাকে।
বোরকা পরা আবার কোন কোন সময় বোরকা ছাড়াই অত্যন্ত সুযোগ সন্ধানী এই নারীরা লোকজনের ভিড়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানিব্যাগ বের করে নেয়। অনেক সময় এরা নিজেরাই পুরুষ লোকের গা ঘেষার চেষ্টা করে। এতে করে যদি একবার তাদের সংস্পর্শে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মানিব্যাগ খোয়া যাবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর যে সকল এলাকায় এই নারী পকেটমাররা সক্রিয় সেগুলো হলো গুলিস্থান, মতিঝিল, পল্টন, ফার্মগেট, মিরপুর, বসুন্ধারা সিটি, গাউসিয়া মার্কেট, আজিমপুর, সায়েন্স ল্যাবরোটরিসহ রাজধানীর জনাকীর্ণ স্থান।
ডিএমপির ডিসি (সদর) হাবিবুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র মহিলা পকেটমার গ্রেফতারে পুলিশের বিশেষ কোন টিম নেই। তবে রাজধানী বিভিন্ন মার্কেটসহ জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে মহিলা পুলিশ, আনসার কাজ করছে। পাশাপাশি মহিলা র্যাব সদস্যও কাজ করছে।
কোন মহিলাকে যদি চুরি বা পকেট মারের কারণে কোন প্রকার সন্দেহের সৃষ্টি হলে সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের উর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।