ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবার থেকে সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুরমাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, গতকাল দুপুরে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪০ সে.মি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার দুই পয়েন্ট নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটে গতকাল ৯মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত কানাইঘাটে রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ মিলি মিটার। পাউবোর উপ প্রকৌশলী নিহার রঞ্জন দাস জানান, পাহাড়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ায় কানাইঘাটের সীমান্ত নদী লোভাছড়া দিয়ে সিলেট অঞ্চলের নদনদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল সকাল থেকে কোম্পানীগঞ্জ বন্যার পানি উপজেলা সদরে ঢুকে পড়েছে। উপজেলা সদরে এক থেকে দেড় ফুট পরিমানে পানি। নৌকা চলাচল করছে উপজেলা সদরে। বন্যা কবলিত হওয়ায় ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ধলাই নদী দিয়ে প্রবল বেগে ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় ছনবাড়ি এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, উপরের দিকে পানি নামতে থাকলেও নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। উপজেলা পরিষদ মাঠে পানি উঠে গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়ন ছাড়া উপজেলার বাকি আটটি ইউনিয়ন বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট এবং গোয়াইনঘাট সারি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জাফলং ও বিছনাকান্দি কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী জানান, প্রায় ১৫ দিনের ব্যবধানে এলাকায় দুই দফা বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামের মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে উপজেলা প্রশাসন আশ্রয় কেন্দ্র খোলার ঘোষণা দেবে বলে তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী জানান, বন্যার্তদের জন্য ৩৩ মেট্রিক চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। গতকাল তিনি জাফলং ও লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

জৈন্তাপুর উপজেলার শেওলারটুক, বাওরহাওর, ঢুলটিরপাড়, মোয়াখাই, কাটাখাল, খারুবিল, লামনীগ্রাম, গাতিগ্রাম, পাঁচ সেউতি, বিড়াখাই, লামাবস্তি, লীপুর, নিজপাট ইউনিয়নের কদমখাল, ময়নাবস্তি, কালিঞ্জবাড়ী, গোয়াবাড়ী, নয়াখেল, রূপচেং, লীপ্রসাদসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম দ্বিতীয় বারের মতো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সারী, বড়গাং, রাংপানী, শ্রীপুর কোয়ারির প্রায় ৪০ হাজার বারকি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানান, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যার্তদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরামর্শ দিয়ে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হয়েছে।

কানাইঘাট এলাকার প্রায় ৬০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, বন্যায় গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ ও জৈন্তাপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান।