রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১৪টি চোরাই প্রাইভেটকার ও ৫টি মোটরসাইকেলসহ চোর চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার ভোররাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার ও চোরাই গাড়ি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় চোরাই গাড়ির কাগজপত্র তৈরি করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে বলে জানায় ডিবি পুলিশ।
গতকাল দুপুরে ১২টায় মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি এডিসি (উত্তর) মনিরুজ্জামান টুকু জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে গাড়ি চোর চক্রের সদস্য জোবায়ের আহম্মেদ বাবুকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি চোরাই প্রাইভেটকার উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় শাহজারুল ইসলাম মিলন (১৯) নামে চোর চক্রের অন্য এক সদস্যকে। মিলন বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে চোরাই গাড়ি নতুন করে রং করাত এবং ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করত।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, চোরাইকৃত গাড়ির কেনাবেচার সঙ্গে রাজধানীর ওয়ার্কশপ মালিক গিয়াস উদ্দিন ওরফে খোকন জড়িত। এরপর শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে খিলগাঁও তিলপাপাড়া থেকে খোকনকে (৩৭) গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতভর রাজধানীর উত্তরা, গুলশান ও সবুজবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ৮টি চোরাই গাড়ি উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃত আসামি মিলন জানান, পূর্বপরিচিত জুবায়ের তার কাছে পুরান গাড়ি মাঝে মাঝে রং করতে আনত। এ সময় জুবায়ের গাড়িগুলো তার এক ভাইয়ের বলে তাকে জানায়। মিলন তাই পরিচিত ওয়ার্কশপ থেকে গাড়িগুলো রং করিয়ে দিত। বিনিময়ে তাকে মোটা অংকের কমিশন দেয়া হতো। তবে গাড়ি চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা সে অস্বীকার করে। এর মূল হোতা গ্রেফতারকৃত জুবায়ের বলে সে জানায়।
অন্যদিকে ডিবির এসি (উত্তর) মো. আল-মামুনের নেতৃত্বে অন্য একটি টিম চট্টগ্রাম মহানগরীতে অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার রাতে ৫টি প্রাইভেটকারসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হল_ মুরাদ (৩২), জাহাঙ্গীর আলম (৪৪) ও সোলাইমান (৩৬)। গ্রেফতারকৃত সোলাইমান সাংবাদিকদের জানান, গাড়ি চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে সে কিছুদিন আগে জেল হতে বের হয়। তবে সে গাড়ি চুরি করে না দাবি করে বলে, সে গাড়ি বিক্রির এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। কেউ তার কাছে গাড়ি নিয়ে এলে সে তা বিক্রি করে দেয়। বিনিময়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে নির্দিষ্ট অংকের কমিশন নেয়। এদিকে রাজধানীতে এসি শিশুক চাকমার নেতৃত্বে ডিবির অন্য একটি টিম শুক্রবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হল_ কামাল আহমেদ (২৮), শাকিল আহমেদ সুজন (২৬) ও এনামুল হক বাবু (২৯)।
এডিসি মনিরুজ্জামান জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিরা অভিনব কায়দায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল চুরি করে। চোরাই গাড়ি বিক্রি করার জন্য তাদের ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে এজেন্ট নিয়োগ করা আছে। এজেন্টরা কিছু অসাধু বিআরটিএ কর্মকর্তার সহযোগিতায় গাড়ির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। কাগজ এমনভাবে তৈরি করা হয় সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাকে আসল-নকল বুঝতে হিমশিম খেতে হয়। এজন্য গাড়ি কেনার সময় ভালোভাবে যাচাইবাছাই করে কেনার কথা বলেন তিনি। প্রয়োজনে বিআরটিএ থেকে কাগজপত্র ভালোভাবে পরীক্ষা করে গাড়ি কেনার জন্য পরামর্শ দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।